আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতে কাজ চলছে: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশ্বের দূরবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতে সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দূরবর্তী গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাই। এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সিভিল এভিয়েশনকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত করার কাজ চলছে।

তিনি সামরিক ও বেসামরিক বিমান চলাচলের সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশে বলেন, বিমান উড্ডয়ন একটি উচ্চতর কারিগরি পেশা। তাই নিরাপদ উড্ডয়ন নিশ্চিত ও বিমানের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে। কারণ পেশাগত ক্ষেত্রে সততা এবং শৃঙ্খলার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১০ বছরে ১০টি যাত্রীবাহী বিমান কিনেছি, যার মধ্যে আছে চারটি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, দুটি ৭৩৭ ও চারটি ৭৭৭ বোয়িং। আমরা আরও দুটি উড়োজাহাজ ক্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী তিন দিনব্যাপী ষষ্ঠ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট সেফটি সেমিনার ২০১৯ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিউইয়র্ক, টোকিও, টরেন্টো ও সিডনির মতো দূরবর্তী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইউএস ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটির ইন্টারনেশন্যাল সেফটি অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে ক্যাটাগরি ১ ঘোষণা করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মত দেন তিনি।

‘এ থেকে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারব আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীরা স্বল্প সময়ে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। এটা মাথায় রেখে আমরা বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়ন করছি,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, যাত্রীসেবার মান বাড়ানো ও বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় গতি আনতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে ১২ মিলিয়নের বেশি যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েকে ১২ হাজার ফুট পর্যন্ত বাড়িয়ে একে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে উন্নীত করতে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেই সাথে বাগেরহাটে খান জাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপাল, ভুটান ও ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিকভাবে নির্মাণ করছে।

‘বিমান ভ্রমণকে সহজলভ্য, আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে সরকার কতগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে,’ বলেন তিনি।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সংখ্যাটি হবে বর্তমান সক্ষমতার আড়াই গুণ বেশি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান চলাচল খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার লক্ষ্যে সরকার সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি’ বিল পাস করেছে।

তিনি বলেন, বিমান উড্ডয়ন একটি উচ্চতর কারিগরি পেশা, যেখানে বিশেষজ্ঞ জ্ঞান আবশ্যক।

বিমান চলাচল খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলে বিমান চালনায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভালো ও সন্তোষজনক মান বজায় রাখছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি ফ্লাইট সেফটি বিষয়ে আইসিএও পরিচালিত এক জরিপে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৭৫.৪৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই সাথে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্প্রতি বিমান পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে পাঁচ তারকা পদক পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান