রোববার এসআরও জারির সম্ভাবনা, আসবে নতুন বিনিয়োগ

কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির অর্থ ৬ মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ১০ শতাংশ ‘গেইন ট্যাক্স’ ছাড় পাবেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। তবে এ টাকা ন্যূনতম তিন বছর বিনিয়োগে রাখতে হবে পুঁজিবাজারে। এমন বিধান রেখে এক সার্কুলার জারি করবে জাতীয় রাজস্ব র্বোড (এনবিআর)।

বিশ্বস্থ সুত্রমতে জানা যায়, আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এসআরও স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসাইন ভুঁইয়া দেশের বাহিরে অবস্থান করায় এসআরও জারি হয়নি।এনবিআর’র চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান দেশে ফিরেছেন এবং আগামীকাল অফিস করারও সম্ভাবনা রয়েছে। আর এনবিআর এর পক্ষ থেকে এসআরও জারি হলেই ডিএসইর সদস্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসবে।

গতকাল শনিবার, এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন আজকের বাজারকে বলেন, আগামীকাল এনবিআর এর পক্ষ থেকে এসআরও জারি হলে সেটার নম্বর আইন মন্ত্রনালয় হয়ে বিজি প্রেসে যাবে। আর বাকি কাজ সম্পন্ন করতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। চীনা কনসোর্টিয়ামের সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার ১০ শতাংশ গেইন ট্যাক্স ছাড়ের সার্কুলার হয়ে গেলে তার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন এই টাকা থেকে যে পরিমানই বিনিয়োগ হবে সেটা তিন বছরের জন্য। তাই এই সময়টা কিন্তু কম নয়, এবং এটা পকৃত বিনিয়োগ।

এদিকে মূলধনি মুনাফায় কর ছাড়ের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ডিএসইর সদস্যরা। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক আজকের বাজারকে বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া টাকার ওপর প্রযোজ্য মূলধনি মুনাফায় ১০ শতাংশ কর ছাড় দেয়ায় আমাদের তারল্য সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। এ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর ছাড়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে এসআরও জারি হলেই ডিএসইর সদস্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসবে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিয়োগের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের শর্তে ১০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন বিএসইসি’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারল্য সংকটের কারণে প্রায়ই বাজারে দরপতন হচ্ছে। বাজারের তারল্য সংকট দূর করতে নির্বাচনের আগের ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। যা আগামী সপ্তাহের মধ্যে টাকা সংগ্রহের কাজ শেষ হবে।

এরপর এই ফান্ডের ৭৫ শতাংশ কিংবা পুরো অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে আইসিবি। এই অর্থ পুঁজিবাজারে ঢুকলে বাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ মে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনতে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মিলিত কনসোর্টিয়াম। গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামকে নন রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস টাকা অ্যাকাউন্টের (নিটা) মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর অনুমতি দেয়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং চ্যানেলে সব অর্থ ডিএসইর অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার পরদিন কনসোর্টিয়ামের বিও হিসাবে ২৫ শতাংশ শেয়ার জমা করে ডিএসই।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কৌশলগত অংশীদারদের প্রস্তাব-সংবলিত টেন্ডার বক্স উন্মোচন করে ডিএসই। দরপত্র প্রক্রিয়ায় কৌশলগত অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত ডিএসইর ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ শেয়ারের এক-চতুর্থাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনতে দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব জমা হয়। এর মধ্যে শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতি শেয়ারের জন্য ২২ টাকা হারে ৯৯২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে। এর বাইরে তারা ডিএসইকে বিনামূল্যে বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৩০৮ কোটি টাকা। তবে মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ হিসাব বছরের জন্য বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়ায় ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের ভ্যালুয়েশন ১ টাকা কমে যায়, যা চূড়ান্ত শেয়ার ক্রয় চুক্তিতে (এসপিএ) সমন্বয় করা হয়।

চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত কারিগরি সহায়তার মধ্যে ডিএসইর ট্রেডিং ও সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের আধুনিকায়ন, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (বিপিএম) সিস্টেম কনসাল্টিং প্ল্যান, বন্ডের টেন্ডার সিস্টেমের জন্য কনসাল্টিং সার্ভিস, ইনফরমেশন ডিসক্লোজার সিস্টেমের জন্য কনসাল্টিং সিস্টেম প্ল্যান, ডাটা সেন্টার ও কো-লোকেশনের জন্য কনসাল্টিং সার্ভিস প্ল্যান, এফডিইপি ও ফিন্যান্সিয়াল ক্লাউড টেকনোলজি স্থানান্তর পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এসব কারিগরি প্রযুক্তির জন্য ১০ বছরের লাইসেন্স এবং তিন বছরের ট্রেনিং ও কনসাল্টিং সার্ভিস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেবে কনসোর্টিয়াম। এর বাইরে তারা আরো বেশকিছু নতুন পণ্য প্রচলন ও বাজার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে।

জাকির/আজকের বাজার