আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ধোনি

জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেললেন ভারতের দু’টি বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
শনিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজের অবসরের কথা জানিয়ে দেন ধোনি।
ভক্তদের উদ্দেশ্যে ধোনির বার্তাটি ছিলো এমন, ‘ক্যারিয়ার জুড়ে আমার প্রতি ভালবাসা এবং সমর্থনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ১৯টা ২৯ মিনিট (স্থানীয় সমময় সন্ধ্যা সাতটা ২৯ মিনিট) থেকে আমাকে অবসর প্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে ধরে নিতে পারো।’
বিদায় বার্তার সাথে ৪ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ধোনি। ভিডিও বার্তায় তার ১৫ বছরের পুরো ক্যারিয়ারের মূর্হুতগুলো তুলে ধরেছেন ধোনি।
২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ধোনির। গত দু’বছর ধরেই ধোনির অবসর নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে ছিলো। কিন্তু কারও চাপে বা প্ররোচনায় অবসর নেয়ার ইচ্ছা তার ছিলো না। নিজের ইচ্ছাতেই অবসর নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিলেন ধোনি।
যেমনটা আগেও করেছিলেন ধোনি। ২০১৪ সালরে ৩০ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালীন আচমকাই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেন ধোনি।
তার সেই আচমকা সিদ্বান্তে অবাক হয়েছিলো ক্রিকেট বিশ্ব। পরবর্তীতে আবারো ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেন ধোনি। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগ মূর্হুতে জাতীয় দলের নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি নেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান-উইকেটরক্ষক হিসেবেই খেলছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ধোনি। পুরো আসরে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দল দুর্দান্ত খেলে সেমিফাইনালে উঠে। কিন্তু সেমিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ভারত।
ঐ বিশ্বকাপের পর থেকে ধোনির অবসর নিয়ে জল্পনা-কল্পনার বীজ আরও বড় হতে থাকে। তবে বিশ্বকাপের ঐ ম্যাচের পর জাতীয় দলের হয়ে আর কোন ম্যাচই খেলেননি ধোনি।
অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনা, কৌতূহলের অবসান ঘটালেন শনিবার সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে সড়িয়ে নিলেন ধোনি।
তার এই ঘোষনার মাধ্যমে শেষ হলো দীর্ঘ ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য এক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ৯০ টেস্টে ৬টি সেঞ্চুরি ও ৩৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৮৭৬ রান করেছেন ধোনি। ব্যাটিং গড়- ৩৮ দশমিক ০৯।
৩৫০টি ওয়ানডেতে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৭৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১০৭৭৩ রান করেছেন ধোনি। ব্যাটিং গড়- ৫০ দশমিক ৫৭।
৯৮টি টি-২০তে ২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৬১৭ রান করেছেন ধোনি। ব্যাটিং গড়- ৩৭ দশমিক ৬০।
উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টে ২৫৬টি ক্যাচ-৩৮টি স্টাম্পিং, ওয়ানডেতে ৩২১টি ক্যাচ-১২৩টি স্টাম্পিং এবং টি-২০তে ৫৭টি ক্যাচ-৩৪টি স্টাম্পিং করেছেন ধোনি।
কেবল ব্যাট হাতেই দলের দায়িত্ব পালন করেননি ৩৯ বছর বয়সী ধোনি, অধিনায়ক হিসেবেও ভারতকে সেরা-সেরা সাফল্য এনে দিয়েছেন। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির তিনটি টুর্নামেন্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড আছে ধোনির।
তার নেতৃত্বে ২০০৭ সালে টি-২০, ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
ধোনির অধীনে ২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাংকিংএ শীর্ষস্থান দখল করে ভারত। সে শীর্ষস্থান ভারত ধরে রেখেছিলো ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। তখনও দলের অধিনায়ক ছিলেন ধোনি।
পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেশের সফলতম অধিনায়ক ধোনিই। তার নেতৃত্বে ৬০ টেস্টে ২৭টি জয়, ১৮টি হার ও ১৫টি ড্র করে ভারত। ওয়ানডেতে ২শটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন ধোনি। এরমধ্যে ১১০টিতে জয়, ৭৪টিতে হার, ৫টিতে টাই ও ১১টি পরিত্যক্ত হয়। টি-২০তে ৭২ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ভারতকে ৪১টি জয়, ২৮টি হার, ১টি টাই ও ২টি পরিত্যক্ত ম্যাচের স্বাদ দেন ধোনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও আইপিএল খেলবেন ধোনি। তবে কতদিন খেলবেন তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।