আমাদের সচেতনতায় শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় চড়আঙ্গারু গ্রামে বসবাস করে আলেয়া খাতুন। স্বামী কৃষি কাজ করে। স্বামীর কাজে সহযোগিতা করে আলেয়া। আলেয়ার দুই ছেলে তিন মেয়ে। ছোট মেয়ে আম্বিয়া। বয়স ৯ বছর। সকাল হতে না হতেই ঘুম থেকে উঠে চলে যায় বাড়ির বাইরে। সারাদিন ব্যস্ত থাকে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা নিয়ে। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ফুলছড়ি নদী। আষাঢ মাস। নদীতে পানি থৈ-থৈ করছে।

অল্প-অল্প স্রোত আছে নদীতে। বাড়ির ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। নৌকায় বসে সবাই মিলে খেলা করছে। হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ। সবাই নদীর ঘাটে এসে দেখে আম্বিয়া নৌকা থেকে পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। অন্যান্য বান্ধবীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউ তাকে নদী থেকে তুলতে পারছে না। অবশেষে আম্বিয়ার চাচা আম্বিয়াকে নদী থেকে তুলে আনল। বেঁচে গেলো আম্বিয়ার জীবন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিশু মারা যায়। এদের বয়স ২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। দেশে শিশুমৃত্যু রোধে এবং বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং তাতে সফলও হয়েছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে দৃশ্যমান কোন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ পর্যন্ত দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০’ থেকে দেখা যায়, দেশে ৫ বছরের কম বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া।

এরপরই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর স্থান প্রায় ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে সফলতার দিক থেকে ডায়রিয়ায় মৃত্যু রোধে বাংলাদেশ এক নম্বর। গণটিকা দেয়ার কারণে ডিফথেরিয়া বলতে গেলে একেবারেই নেই। ধনুষ্টংকার এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য এদেশে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।

শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি খাতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়নি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় শিশুদের সাঁতার শেখানোর উপর দু’টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতায় আটটি সংস্থার মাধ্যমে ‘শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি শিশু ও কিশোরদের সাঁতার শেখানোর গুরুত্বের উপর দেশব্যাপি বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এর তিনটিই বাংলাদেশের সাফল্যের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। এগুলো হলো-পুকুরের পাড়ে বেড়া দেয়া, শিশুর দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং শিশুকে সাঁতার শেখানো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুমৃত্যু কমাতে প্রসুতিদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। এ সময় স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শের সংগে শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। এছাড়া সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যে সকল এলাকায় ডোবা, নালা, পুকুর অথবা নদী আছে। সে সকল এলাকার মা, বাবাসহ পরিবারের সকল শ্রেণীর মানুষদের সচেতন হতে হবে। যাতে কোন শিশু পানির দিকে যেতে না পারে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ব্যাপক সচেতনতামুলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তবেই আমাদের শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান