আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্য হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন কনিকা

সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছিলেন স্বামী। সে সময়ে স্বামীর চিকিৎসায় সহায় সম্বল হারিয়েছেন কনিকা রাণী রায়(৩৫)। শেষ সম্বল একটি ছাগল বিক্রির টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা দিয়ে হয়েছিলেন আমার বাড়ি আমার প্রকল্পের সদস্য। সেখান থেকে ঋণ নিয়ে মুড়ি-মোয়া তৈরীর আয়ে ফিরিয়ে এনেছেন সংসারের সুদিন। সে আয়ে বাজারে দোকান দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছেন পঙ্গু স্বামীর। এখন দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার তার।

কনিকা রাণী রায়ের বাড়ি নীলফামারী জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের আরাজী ইটাখোলা গ্রামে। পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী সুসেন্দ্র নাথ রায়(৪০)। স্বামীর ক্ষুদ্র ব্যবসার সামান্য আয়ে কোনভাবে চলতো তাদের সংসার। হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর ডান পা অচল হলে সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। সহায় সম্বল বিক্রি করে সুস্থ করে তুললেও পঙ্গত্ব বরণ করতে হয় তার স্বামীকে। পঙ্গু স্বামী আর দুই সন্তানের সংসারে কনিকা দেখতে শরু করেন ঘোর অন্ধকার। এরই মধ্যে পাশে এসে দাঁড়ায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কর্মীরা(সে সময়ের একটি বাড়ি একটি খামার)কনিকা জানায়, স্বামীর চিকিৎসায় সব শেষ করে সম্বল ছিল মাত্র একটি ছাগল। ওই ছাগলটি ৮০০ টাকায় বিক্রি করে ২০১৩ সালে সঞ্চয় জমা দিয়ে হয়েছিলেন আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের অধীনে গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য। সেখান থেকে ২০১৪ সালের মে মাসে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন নিজহাতে মুড়ি-মোয়া তৈরী ও চিড়া ভাজা বিক্রির ব্যবসা। সে আয়ে কিছুটা আলোর মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৬ হাজার, ২০ হাজার এবং সর্বশেষ ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন প্রসারিত। আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তার হাতে বানানো মুড়ি, মোয়া ও চিড়া ভাজা বিক্র করলেও এখন দোকান দিয়ে বসেছেন পলাশবাড়ি বাজারে। সেখানে নিজের তৈরী মুড়ি চিড়া ছাড়্ওা বিক্রি করছেন অন্যান্য পণ্য। সে দোকানে কর্মসংস্থান হয়েছে তার পঙ্গু স্বামীর।

কনিকা বলেন,“সবশেষ সম্বর বাড়ির ভিটার ১৫ শতক জমি ছাড়া আমার আর কিছুই ছিল না। এখন ওই ভিটা ছাড়াও আমার রয়েছে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ২টি গরু, ১ বিঘা আবাদি জমি বন্ধক নিয়েছি ৭০ হাজার টাকায়। ঋণ পরিশোধের পরও আমার ব্যবসার ব্যবসায় পুঁজি খাটছে লক্ষাধিক টাকা। সমিতিতে সঞ্চয় রয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। সুসেন্দ্র নাথ রায় বলেন,“চিকিৎসায় সহায় সম্বল হারিয়ে অন্ধকার দেখছিলাম আমি। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প আমার স্ত্রীকে সদস্য করে আলোর পথে এনে দিয়েছে। সেখান থেকে ঋণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসা করছি। তাতে আমার মতো একজন পঙ্গু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ছেলে আপন চন্দ্র রায় লেখাপড়া করছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। আর মেয়ে পরশী রায় পড়ছে প্রথম শ্রেণীতে”।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাঠ সহকারী মো. মোরসালিন জানান, ওই গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য ৬০ জন। তারা সকলে ছিলেন কনিকার ন্যায় দরিদ্র। মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে তারা এখন সকলেই স্বাবলম্বী। ওই সমিতিতে প্রকল্পের ঋণ রয়েছে ১১ লাখ টাকা টাকা। সদস্যদের সঞ্চয় জমা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের অনুদানসহ সঞ্চয়ের এখন পরিমান ৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মোখছেদুল হক জানান, জেলার সদর উপজেলায় মোট ৪৮০টির সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৮৩ জন। এসব সদস্যের সঞ্চয়ের পরিমান ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তিনি বলেন,“প্রকল্পের কর্মীরা নিলসভাবে কাজ করছেন মাঠে। তাদের পর্যবেক্ষণ এবং সহযোগিতায় কনিকার ন্যায় সকল সদস্যই এখন কর্মমূখি”। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান