ইউনূসকে সম্মান দিতে হবে : অর্থমন্ত্রী

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ও হত দরিদ্রদের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রথম ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রঋণের কারণে দেশে এখন দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে।

ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মানিত ব্যক্তি ও তাঁকে সম্মান দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য ব্র্যাক ও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদেরও প্রশংসা করেন তিনি।

বৃস্পতিবার (২ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) লোন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশংসা করেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রথম হত দরিদ্রের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এরপর থেকে অনেক সংস্থা ও এনজিও এ খাতে এসেছে। তারা হত দরিদ্রের মাঝে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দারিদ্র্য নিরসনে আমরা অনেক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি এবং এটাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছি। আগামী ২০৩০ সালে দেশে কোনো দরিদ্র মানুষ থাকবে না। এছাড়া আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশে আর কোনো হত দরিদ্র মানুষ থাকবে না।’

এসডিএফ’র চেয়ারম্যান এমআই চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ইউনুসুর রহমান এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান।

ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘এসডিএফ’র মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের ধারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, আমরা আর পিছিয়ে পড়বো না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, গ্রামে সব ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে। অতি দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো।’

এসডিএফএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘এ যাবৎ এসডিএফের বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সর্বমোট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ এবং পরিবার প্রায় ১১ লাখ। মোট ৫ হাজার ৬৪২টি গ্রামে সংগঠনের আওতায় ৯ লাখ ৪২ হাজার সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশই নারী এবং ৯২ শতাংশ নারী সদস্য বিভিন্ন নির্বাহী কমিটির মূল পদে নিযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গ্রাম অঞ্চলের চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের সমন্বিত উদ্যোগ এবং অভূতপূর্ব সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রজেক্ট (এসআইপিপি-২) বাস্তবায়ন শুরু হয় এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রকল্পটি দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ১৬টি জেলার ৩ হাজার ২৬২টি গ্রামের ৬০ লাখ সুবিধাভোগীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্ন্তভুক্ত করতে সমর্থ্য হয়। পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড ও দ্রুত অর্থ ছাড়করণের ফলে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী প্রকল্পটি নির্ধরিত সময়ের এক বৎসর পূর্বে সমাপ্ত করা হয়।

এসআইপিপি-২ এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সরকারের রূপকল্প ২০২১ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সফলভাবে অর্জনের জন্য সরকারের সহায়ক হিসেবে দারিদ্র্যবিমোচন ও অধিকতর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার ও বিশ্বব্যাংক এর অংশীদারিত্বে ছয় বছর মেয়াদী (জুলাই ২০১৫-জুন ২০২১) নতুন জীবন লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির মোট বরাদ্দ ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পটি বিবিএস কর্তৃক দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী অগ্রাধিকারকৃত ১৩টি জেলার ৩৬টি উপজেলার পিছিয়ে পড়া মোট ২ হাজার ৫০০টি গ্রামে বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরে সর্বমোট ৫ লাখ পরিবারকে সুবিধা প্রদান করা হবে।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট