ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতেই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে : কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতেই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব ধরণের সারের পর্যাপ্ত মজুদের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সরকার নিবিড়ভাবে মনিটর করছে। কেউ সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও মন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সারের দাম বৃদ্ধি, মজুদসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদরদী, কৃষকের প্রতি রয়েছে তাঁর পরম মমতা। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিতরণসহ সার্বিক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ডিএপি সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফসলের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে শতকরা ২০ ভাগ কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে হবে। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে কৃষকের খরচও কমবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এছাড়া নন ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বছরে ব্যবহার হয় ৩২ লাখ টনের বেশি। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৪ গুণ বেড়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে দাম বাড়ানো হয়নি। কাজেই ইউরিয়া সারের কেজিতে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদনে তা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
সারের দাম বাড়ায় বিএনপিসহ কিছু বাম দলের উদ্বেগ প্রকাশ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র শাসন আমলে সারসহ কৃষি উপকরণের চরম সংকট ছিল। সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। বিপরীতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সারের উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
বিএনপি’র শাসন আমলে (২০০৫-০৬ অর্থ বছরে) সারে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরের তুলনায় বর্তমানে ২৮ গুণ বেশি বা ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকগণ সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ০৩ থেকে ০৪ গুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়ার আমদানি ব্যয় ৮১ টাকা, টিএসপি ১০৮ টাকা, এমওপি ১০৬ টাকা এবং ডিএপিতে ১২৩ টাকা। এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৫৯ টাকা, টিএসপি ৮৬ টাকা, এমওপি ৯১ টাকা এবং ডিএপিতে ১০৭ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।