উৎপাদন বন্ধ কিন্তু দরবৃদ্ধিতে শীর্ষে সেন্ট্রাল ফার্মা

তিন মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের। তার পরও কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা বেড়ে চলেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত এক মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯৪ শতাংশ। এমনকি কোম্পানিটি গত সপ্তাহে দরবৃদ্ধির তালিকায় (সমাপনী দরের ভিত্তিতে) শীর্ষে অবস্থান করছে। সর্বশেষ পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ২১ শতাংশ।

উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে এমন দরবৃদ্ধিতে কোম্পানির কর্মকর্তারাও অবাক। তারা বলছেন, তিন মাস আগে কোম্পানির কিছু ওষুধের লাইসেন্স বন্ধ করে দেয়ার কারণে উৎপাদন তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে। তার পরও কেন কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে, সে ব্যাখ্যা তাদের কাছে নেই। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পাঠানো এক চিঠির উত্তরে কোম্পানিটি জানিয়েছে, শেয়ারটির দর ও লেনদেন এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে অপ্রকাশিত কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৮ টাকা ৬০ পয়সা, যা বৃহস্পতিবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সায়। এ হিসাবে এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা বা ৯৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এদিকে শেয়ারদরের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি যেখানে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ৯ লাখ ৫ হাজার ৩৪৫টি শেয়ার লেনদেন হয়, সেখানে ২৭ ফেব্রুয়ারি এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৯। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৭৬১ বারে কোম্পানিটির ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

কোম্পানির শেয়ার বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা কামাল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, তিন মাস আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদের কিছু ওষুধের লাইসেন্স বন্ধ করে দেয়। এতে আমাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেলে আমরা ফের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করব। তিনি আরো বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদের কারখানা পরিদর্শন করে যেসব সমস্যা তুলে ধরেছিল, আমরা সেগুলো সমাধান করেছি। তারা আমাদের রেনিটিডিন গ্রুপের ওষুধের প্লান্টটি বন্ধ করতে বলেছিল। আমরা সেটাও করেছি। ১০ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি টিম আমাদের কারখানা পরিদর্শনে আসবে। এরপর তারা ছাড়পত্র দিলে আমরা পুনরায় উৎপাদন চালু করতে পারব।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে খোলা কোম্পানিটির তিনটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কোম্পনিটির কাছে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৪৬২ টাকার কর বকেয়া থাকায় এনবিআর ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করে। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির জন্য পড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই কোম্পানিটিকে তাদের সব লেনদেন নগদে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৪ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ইপিএস হয়েছে ৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ১ পয়সা।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরে ৪৮ পয়সা ইপিএস হয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৫১ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩০ জুন কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১৫ টাকা ৪ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস।

২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ১১৯ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪৪। এর ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকের কাছে। এছাড়া ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। তথ্যসূত্র – বণিকবার্তা।

আজকের বাজার/ এ.এ