উৎসবমুখর পরিবেশে নাসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে

নারায়ণগঞ্জবাসী আজ বেঁচে নিচ্ছেন নগরপিতাকে। উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল ৮টা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ ।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, এই নির্বাচনে ২ হাজার ৯১২টি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা রোধে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পেনাল কোডের অধীনে তারা মামলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারবেন।
গত ৩০ নভেম্বর এই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এরা হলেন- বাংলদেশ আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৩৩ ভোট কক্ষে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৩৪ জন প্রার্থী।
নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ নির্বাচনে ১৯২টি ভোট কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। প্রতি কেন্দ্রে আছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ সদস্য।
সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার আজ বাসস’কে জানান, নারায়ণগঞ্জে আলাদাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯২টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃতে আছে পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
তিনি বলেন, নাসিক নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম আছে ৬৪টি, প্রতি টিমে সদস্য পাঁচজন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য রয়েছে। আরও অতিরিক্ত ৬ প্লাটুনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠিয়েছেন বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নাসিক নির্বাচনে র্যা বের স্ট্রাইকিং ফোর্স আছে ৩টি, চেকপোস্ট আছে ৬টি, টহল টিম রয়েছে ৭টি ও স্ট্যাটিক টিম আছে ২টি, জানান তিনি।
এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৯টি সংস্থার ৪২ পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাগুলো হলো- জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিক ফাউন্ডেশন, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস। তবে, পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মানার পাশাপাশি এসব সংস্থাকে ভোট শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের শর্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।
তিনি বলেন, নির্বাচনে পুলিশ, র্যা ব, আনসার, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ৫ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে । প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন উপলক্ষে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। নির্বাচনের এই পরিবেশ কেউ বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন তাহলে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ভোটাররা কেন্দ্রে নিশ্চিন্তে ভোট দিতে আসবেন।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।