একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক

নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সংযোগস্থলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ। এ ব্যারেজ রক্ষার্থে বাম তীরে লালমনিরহাট অংশে নির্মাণ করা হয় ফ্লাড বাইপাস সড়ক। যা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থেকে ডিমলা হয়ে নীলফামারী যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে এখন শুধু কাদামাটি।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারীর ডিমলা খড়িবাড়ী সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে যায়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১১৫ কিলোমিটার।

২০২১ সালের ২০ অক্টোবর হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ওই দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প রক্ষায় নির্মিত সড়কের (ফ্লাড বাইপাস) ৩০০ মিটারের মতো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় লালমনিরহাটের সঙ্গে নীলফামারীর সড়ক যোগাযোগ। পরে জরুরি বরাদ্দ নিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার করে পাউবো।

কিছুদিন না যেতেই সড়কটি আবারো এবড়োথেবড়ো হয়ে যায়। এরপর বাইপাস সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি। সড়কটিতে বালু ও মাটি ভরাটের কারণে শুষ্ক মৌসুমে থাকে ধুলোবালি আর বৃষ্টিতে কাদায় ভরে যায়। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, তিস্তা ব্যারেজ বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার অনাবাদি জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বাড়তি ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মূল পরিকল্পনা গৃহীত হয় পাকিস্তান আমলে ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৭ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী ও নীলফামারীর ডিমলার খালিসা চাপানী ইউনিয়নের ডালিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে তিস্তা নদীর ওপর ৪৪টি রেডিয়াল গেট সম্বলিত ৬১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্যারেজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৯১ সালে মূল ব্যারেজের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ক্যানেলসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। ওই সময় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাগলাপীর থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের বড়খাতা এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে পাউবো।

২০০১ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের ওপর দিয়ে সংযোগ সড়কটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে সে সময় ভারী যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায় করা হতো। এ সংযোগ সড়কের ফলে বিভিন্ন জেলার দূরত্ব ও সময় অনেকটা কমে আসে। লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক বিপ্লব ঘটে। তবে ব্যারেজ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর ওই সড়ক দিয়ে অধিক ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের চরম অবহেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় সড়কটির বেহাল অবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে বেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। শুধু তাই নয়, রোগী পরিবহন ও জরুরি কোনো প্রয়োজনে দ্রুত যাতায়াত করা যায় না এ সড়ক দিয়ে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।

কথা হয় তিস্তা ব্যারেজ এলাকার বাবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে কাদার জন্য চলাচলই করা যায় না। গাড়ির চাকা আটকে যায় কিংবা পিছলে পড়ে উল্টে যায়। আবার বৃষ্টি না হলে ধুলার জন্য চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।

এই সড়কে নিয়মিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান শাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, একটু বৃষ্টির কারণে রাস্তার যে অবস্থা, এখানকার মানুষ অনেক কষ্ট করছে। সরকারের কাছে বিনীত আবেদন, অন্তত কিছু ভাঙা ইটের খোয়া যদি এ রাস্তায় ফেলা যেতো, তাহলেও গাড়িগুলো কোনোরকমে চলতো, মানুষের এত দুর্ভোগ হতো না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাড বাইপাস সড়ক সংস্কারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হবে। বন্যার আগেই সড়কটি সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান