ওষুধ বিক্রয় ২৫ শতাংশ হ্রাস

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বাইরে এখন আর দেখা যায় না ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। ভিড় নেই ডাক্তারদের চেম্বারের বাইরে রোগী কিংবা ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদেরও। করোনার কারণে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে দেখা গেছে এ চিত্র। ডাক্তাররা চেম্বারে বসছেন না নিয়মিত। রোগীরা ভয়ে যেতে চান না হাসপাতালে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে ওষুধ বিক্রিতে। তবে বেড়েছে ওটিসি (ওভার দ্য কাউনটার) জাতীয় ওষুধের চাহিদা।

ওষুধ বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার সময় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের ব্যবহার বাড়লেও সার্বিকভাবে কমেছে ওষুধ বিক্রি। তাদের মতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এই বিক্রি ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ষাটোর্ধ্ব নুর নাহার খান ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছেন। গত চার মাস আগে তার পিত্তথলিতে পাথর শনাক্ত হয়। তার অপরাশেন করা জরুরি হয়ে পড়লেও তিনি ভয়ে হাসপাতালে যেতে চাচ্ছেন না। টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেলেও ডাক্তার জরুরি ভিত্তিতে তাকে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন।

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দাঁতের ব্যথায় অস্থির হয়ে আছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত আজমেরি কুমকুম। হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে তিনি নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করাতেন। কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতালটি করোনা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করাতে সেখানে যেতে পারছেন না। অন্য ডাক্তারদেরও কেউ বসছেন না চেম্বারে। করোনার ভয়ে যেতে পারছেন না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও (বিএসএমএমইউ)।

এরকম অনেক রোগীই এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় হাসপাতালে যাচ্ছেন না। একই আশঙ্কায় অনেক ডাক্তারও বন্ধ রেখেছেন তাদের চেম্বার।

ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ এর বিক্রয় প্রতিনিধি ফরিদ উদ্দিন জানান, গত তিন থেকে চার মাস ধরে তাদের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। কারণ ওষুধের দোকানগুলোতে আগের মতো ওষুধ বিক্রি হচ্ছে না। ডাক্তাররাও আগের মতো চেম্বারে বা ক্লিনিকে যাচ্ছেন না।

তিনি জানান, ওটিসি জাতীয় ওষুধ যেমন নাপা/প্যারাসিটামল, ওর স্যালাইন, জিংক, ভিটামিন সি, গ্যাসট্রিক, জ্বর বা মাথা ব্যথার মতো কিছু ওষুধের বিক্রি আগের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও অন্যসব ওষুধের বিক্রি বেশ কমে গেছে। কারণ ওটিসি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মানুষ কিনতে পারে। কিন্তু এন্টিবায়োটিক বা অন্য রোগের ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ব্যবহার করা যায় না। যেহেতু ডাক্তাররা এখন চেম্বারে বসছেন না আবার রোগীরাও ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না তাই ওষুধ বিক্রি আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে।

রাজধানী যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের ফার্মা চয়েজের স্বত্ত্বাধিকারী লিমন জানান, তাদের দোকানে ওষুধ বিক্রি আগের তুলনায় বেশ কমে গেছে। তবে করোনার কারণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসোল, স্যাভলন, মাস্ক বিক্রি বাড়লেও গত এক মাস ধরে তাও কমে গেছে।

গোলাপবাগের খান ফার্মেসির মালিক আনিসও বলেন একই কথা। তিনি জানান, রোগীরা হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে না যাওয়ায় কিংবা ডাক্তার চেম্বার বন্ধ রাখায় নতুন প্রেসক্রিপশন না হওয়ায় ওষুধও বিক্রি হচ্ছে না। সিরিয়াস ধরনের রোগীদের কেউ কেউ পুরাতন প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ কিনছেন। তবে সেই সংখ্যাও খুব কম।

ওয়ারী থানার অভয় দাস লেনের খেয়া ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা সিয়াম জানান, মানুষের এখন চরম দুঃসময় যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ ওষুধ কিনছেন না।

মানিক নগরের ইসলাম ড্রাগ হাউজের মালিক বকুল জানান, করোনার কারণে এজিথ্রোমাইসিন, আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিন, ফেক্সোফেনাডিন, প্যারাসিটামল, সেটরিজিন, ভিটামিন সি ডি থ্রি ও জিংক, হ্যাক্সিসোল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের বিক্রি বাড়লেও অন্য সব ধরনের ওষুধের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.পুলক কুমার দে জানান, করোনার কারণে আমার দুইটা চেম্বর বন্ধ রেখেছি। একটা সালাউদ্দিন স্পেশালাজইড হাসপাতাল অপরটা রামকৃষ্ণ মিশন চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র।

তিনি বলেন, পুরনো রোগীদের ফোনে সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া বেশি জরুরি হলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউটে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।