কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সৌখিন সামগ্রী যাচ্ছে বিদেশে

ফেলে দেয়া, পচনশীল কচুরিপানাকে নান্দনিক রূপ দিয়ে ফুলদানি, ফুলের টব, মাদুর, ঝুড়িসহ ঘর সাজানো অন্যান্য আকর্ষণীয় জিনিস তৈরি করছে গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা। তাদের নিপুণ হাতের ছোয়ায় তৈরি এসব মূল্যবান সামগ্রী আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার মদনের পাড়া গ্রামের সুভাষ চন্দ্র ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে আসেন তার শ্বশুরবাড়ি ভাষার পাড়ায়। তার নেয়া প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে কয়েকজন নারীকে প্রশিক্ষণ দেন। তারপর ভাষাপাড়া, কঞ্চিপাড়া, মদনেরপাড়া ও সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর ও তালতলা গ্রামের ২৫০ জন নারীকে নিয়ে শুরু করেন এ কাজ।

এরপর থেকে ওইসব গ্রামজুড়ে বেশকিছু বাড়ির আঙ্গিনায় নারীরা তৈরি করছেন শুকনো কচুরিপানা দিয়ে এসব নানান ঘর সাজানো জিনিস। ৪টি গ্রামের ২৫০ জন দরিদ্র নারী যুক্ত হয়েছেন এই কাজের সাথে।

এমনই একজন নারী উদ্যোক্তা গৃহিনী হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী জমিতে কাজ করে। চলতি শীতকালীন সময়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন আমার আয়ের টাকা দিয়ে সংসারের খরচ জুগাতে সহায়তা করি।’ এ কাজ করে প্রকারভেদে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২০০- ৩০০ টাকা আয় হয় বলে তিনি জানান।

কলেজ পড়ুয়া হাসনা হেনা বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়িতে বসে থাকতে হয়। আমি বাড়ির কাজ, নিজের কাজ ও পড়ালেখার পাশাপাশি কচুরিপানা দিয়ে ফুলদানি তৈরি করি। দিনে ৫-৬ টা পর্যন্ত ফুলদানি তৈরি করতে পারি। তাতে আমার প্রতিদিনের ২০০-২৫০ টাকা আয় হয়।’

এই কাজের উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র জানান, তার পুঁজি কম। যে কারণে তিনি তার এই কাজকে সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। কচুরিপানার এই ঘর সাজানো জিনিসপত্রের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিদেশেও চাহিদা কম নয়। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে নিজের এই হস্তশিল্প কারখানাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ জানান, তিনি এই কাজ কোনোদিন দেখেননি। শুকনো কচুরিপানা এক সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হতো। আর গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন সেই পানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফুলদানিসহ অন্যান্য জিনিস।

তিনি বলেন, ‘এই কাজ পেয়ে আমাদের এলাকার নারীদের যেমন উপকার হচ্ছে, তেমনি আমাদের গ্রামের তৈরি সামগ্রী দেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে আমেরিকায়। এটা আমাদের গর্বে বিষয়।’ সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান