কর্মজীবী মায়েদের করোনা সংক্রমণের দিনগুলোতে তটস্থ থাকতে হচ্ছে

করোনাভাইরাস পৃথিবীতে এমনভাবে বিস্তার করেছে যে, নিজ ঘরেও আর কেউ নিরাপদ নয়। নানাভাবে দিন-দিন সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এর মধ্যে যেসব নারী একই সাথে কর্মজীবী ও সন্তানের মা তারা ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। শুধু ঝুঁকিই নয়, বরং আতঙ্কিত থাকতে হচ্ছে সারাক্ষণ।

সন্তান এবং পরিবারের সর্বাঙ্গীন কল্যাণকারী মানুষটি পরিবারকে ভালো রাখতে ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ফলে কর্মজীবী মায়েদের সারাক্ষণ তটস্থ থাকতে হচ্ছে। ভোরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকে ফেরা অব্দি কত শত মানুষের সংস্পর্শে তাকে আসতে হয়। তার সামনের কোন মানুষটি ভাইরাসের বাহক সেটা তিনি জানতেও পারেন না। সেই ভাইরাসের একাংশ নিজের অজান্তে নিয়ে গিয়ে ঘরে থাকা সন্তান এবং অন্যদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

মা যদি হন কর্মজীবী তাহলে সমস্যার অন্ত থাকেনা। তাছাড়া কর্মজীবী নারীদের একটা অংশ সিঙ্গেল মাদার হিসেবে সন্তানকে লালন-পালন করতে বাধ্য হয়েই কর্মক্ষেত্রে থাকতে হচ্ছে।

সন্তানকে খাওয়ানো, গোসল করানো, লেখাপড়াসহ সব সামলাতে হয়। পাশাপাশি অফিসও করতে হয়। করোনার এই দিনে সেটা হয়ে উঠেছে আরো ভয়ংকর। যদিও স্কুল বন্ধ থাকায় সন্তানকে স্কুলে পাঠানো কিংবা নিয়ে আসার বিষয়টি থাকছে না। কিন্তু তিনি নিজে সন্তানকে ফেলে রেখে অফিসে যাচ্ছেন এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। আবার ফিরছেন ভয় আর শংকা নিয়ে।

অন্যদিকে স্কুলে অনলাইন ক্লাস, সেগুলো তদারকিতে কর্মজীবী মা সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না। ফলে সন্তানের পড়াশোনা ব্যবহত হচ্ছে। জ্যামের শহরে ভীড় ঠেলে, গাদাগাদি করে বাসে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে রোজ অফিস করা এবং অফিস শেষে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে বাসায় ফেরা তার নিত্য-নৈমত্তিক ব্যপার। কী এক দিন এলো অফিস ফেরত মা তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারছে না, যতক্ষণ না তিনি নিজে গোসল করে, পরিচ্ছন্ন না হচ্ছেন। নিজের চেয়েও মায়ের কাছে তার সন্তানের নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপুর্ণ।

করোনাভাইরাসের এই ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় একজন পুরুষ সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে চাইলে একাকী থাকতে পারেন। কিন্তু, কর্মজীবী নারী যিনি কারো মা, কারও স্ত্রী তার কোনভাবেই সম্ভব না। সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা অতুলনীয়। তিনি চাইলেই এমন দুর্যোগের সময় সন্তানকে দূরে ঠেলে দিতে পারেন না। ফলে কর্মজীবী মায়েদের জন্য করোনাকাল হয়ে উঠেছে বিষে ভরা কাঁটার সমান। মাতৃত্বকালীন ছুটি বলে যে বিষয়টি চালু আছে এই দুর্যোগকালে একইভাবে কর্মজীবী মায়েদের সন্তানের কথা বিবেচনা করে বিপদকালীন ছুটির ব্যবস্থা রাখা হলে ভালো হতো।

নিজের পায়ের দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সমাজের নানা কথা শুনওতে শুনতে যে নারী কর্মজীবনে প্রবেশ করে তাকে নানা কারণে পঁচিশেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। তারপর নতুন সংসার আর চাকরি নিয়ে হিমশিম খেতে খেতেই সে হয়তো অনাগত সন্তানের আগমনী বার্তা শোনে বছর না ঘুরতেই।

সন্তানের অসুখে, পরীক্ষায় খারাপ ফলে যেন পিতার কোন দোষ নেই, সব দোষ কর্মজীবী নারীর। যে সব কর্মজীবী নারীর সন্তান দেখাশোনার জন্য পরিবারে কেউ নেই তাদের অনেকেই সন্তানের জন্য কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর যারা কষ্ট করে চাকরি করছেন ও সন্তান পালন করছেন তারা দু’টি একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন করোনাভাইরাসের এই দুর্যোাগকালে সেটি হয়ে উঠেছে আরো ভয়াবহ। কর্মজীবী মায়েরা না পারছেন কাজ ছেড়ে দিতে আবার না পারছেন ঠিকমত ধরে রাখতে। উভয় সংকটে পড়ে তিনি এবং তার সন্তানকে ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান