কি হবে যদি গুগল বন্ধ থাকে?

গুগল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকতে পারে এটি অনেকেরই কল্পনারও বাইরে। এই নিবন্ধে গুগলেরই এক কর্মী আশীষ কেদিয়া জানাচ্ছেন ঠিক কি কি ঘটতে পারে যদি বন্ধ থাকে গুগল ৩০ মিনিটের জন্য।
সময়টা ২০১৩ সালের আগস্ট। গুগল এবং এর বিভিন্ন সেবা ২-৩ মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলাফল? সারা বিশ্বের মোট ইন্টারনেট ট্রাফিক নেমে আসে ৪০% এর নিচে। প্রায় কাছাকাছি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালেও।
খেয়াল করুন, উপরের দুটি ঘটনাই খুব অল্প সময়ের কিন্তু এমনটি যদি ঘটে ৩০ মিনিটের জন্য তাহলে কেমন হবে?
১. প্রথম কয়েক মিনিট মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পরবে। কেউবা ফোন দিয়ে বসবেন সার্ভিস প্রোভাইডারকে সমস্যা জানতে চেয়ে। একটু কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা শুরু করবেন।
২. একটু পরেই সবাই উপলব্ধি করবে যে আশংকা সত্য। এরপরও অবিশ্বাসী অনেকেই গুগলের হোমপেজ বারবার রিলোড করার চেষ্টা করে যাবেন।
৩. গুগল সার্ভার এরর পেজের স্ক্রিনশট নিতে ব্যস্ত হয়ে পরবেন বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহারকারীরা।
৪. আপনার ফেসবুক নিউজফিড ভরে যাবে এধরনের লেখা আর ইমেজে- ‘ওএমজি! কান্ট বিলিভ!’, ‘আই উইটনেসড সামথিং অ্যাস্টোনাইশিং!’ ইত্যাদি।
৫. অনেকেই বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন খোঁজার চেষ্টা করবেন এবং প্রথমবারের মত টের পাবেন যে আর কোন সার্চ ইঞ্জিন আছে সেটিই তাঁরা জানেন না।
৬. বিং এবং ইয়াহু প্রচুর ট্রাফিক পেতে শুরু করবে।
৭. ডাক ডাক গো ডট কম টুইটারের ট্রেন্ডিং শুরু করবে। মানুষ মনে করবে এটি একটি ভাল সার্চ ইঞ্জিন (যেহেতু তারা ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করে না)।
৮. ব্যাকএন্ডে গুগলের সেবা ব্যবহার করে এমন অনেক অ্যাপ অকেজো হয়ে পরবে। কেবল জিমেইল বন্ধ থাকাতেই বিশ্বে উৎপাদনশীলতা নেমে আসবে ভয়ংকর স্তরে।
৯. শুধু গুগলই অবিশ্বাস্য রকম আয় হারাবে না, এই তালিকায় যুক্ত হবে অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান
যাঁরা গুগলের বিভিন্ন সেবা নিয়ে থাকেন।
১০. অ্যানড্রোয়েড ব্যবহারকারীরা স্রেফ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরবেন আর আইফোন ব্যবহারকারীরা পথে লেন হারাবেন যদি গুগল ম্যাপ ৩০ মিনিটের জন্য অকেজো হয়ে যায়।
১১. মজার বিষয় হল এই হযবরল অবস্থার প্রায় কোন কিছুই চীনের জনজীবনে তেমন প্রভাব ফেলবে না।
১২.গুগলের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মহানন্দে গান গাইবেন।
আর ৩০ মিনিট পর সেবা ফিরে পেলে যা ঘটবে:
১. গুগল পুরো বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বিবৃতি দেবে, পরিষ্কার করবে অঘটনের কারন (হয়তো!)
২. বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রযুক্তিপ্রিয় ব্যক্তিরা আসল কারন বের করতে লেগে পরবেন।
৩. অনেকেই ধারনা করবেন এর পেছনে হয়তো কোন হ্যাকার গ্রুপ জড়িত আছে। মানুষ বিভিন্ন হ্যাকার গ্রুপের কাছে তাঁদের মতামত জানতে চাইবেন।
৪. মিডিয়াগুলো বিশ্লেষকদের ডেকে তাঁদের মাধ্যমে বিশ্লেষন দেয়ার চেষ্টা করবে।
৫. অনেক ব্লগারই পোস্ট লেখা শুরু করবে এই বিষয়ে- ‘আমরা কতটা নির্ভর করি গুগলের উপরে’, এমনকি মিডিয়াও এমনটি শুরু করবে।
৬. নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্লাটফরম ‘কোরা’য় প্রশ্নে প্রশ্নে সয়লাব হয়ে যাবে গুগল বন্ধ থাকার কারন জানতে চেয়ে। সাথে থাকবে আরো কিছু প্রশ্ন যেমন- এটি কি আবারো ঘটতে পারে? আমার ডাটা কি নিরাপদ ছিল? এটা কি সত্যি যে গুগল হ্যাকড হয়েছিল? ইত্যাদি।
৭. একটি বড় ব্যবহারকারী দল গুগল থেকে অন্য সেবায় স্থানান্তরিত হবেন।
৮. ‘বাজফিড’ আর ‘স্কুপহুপ’ এর মত সাইটগুলো এই ধরনের পোস্ট দেয়া শুরু করবে- গুগল বন্ধ ছিল ৩০ মিনিটের জন্য, আপনি বিশ্বাসও করতে চাইবেন না এরপর কি অপেক্ষা করছে। কিংবা- গুগল বন্ধ থাকলে যে ১০টি কাজ করবেন ইত্যাদি।
৯. মানুষ এই উত্তরগুলো খুঁজে পড়বে এবং উপলব্ধি করবে যে এর অনেককিছুই আসলে চারপাশে ঘটছে।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

আজকের বাজার:এসবিএম/এলকে/৭ মে,২০১৭