কুমিল্লায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছেন

জেলার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে গত ১১ মাসে প্রায় ৬২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে জেলা ট্রাফিক পুলিশ। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বই ও পজ মেশিন দিয়ে ১ হাজার ৭১২টি মামলায় জরিমানার টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের ভয়াবহতা নিরসনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। জেলা ট্রাফিকের প্রধান পরিদর্শক বলেন, কাউকে হয়রানি ও অর্থদন্ড করা নয়, সড়কে মৃত্যু ও দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

জানা গেছে, জেলায় পাঁচটি জোনে (কুমিল্লা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, লাকসাম) বিভক্ত হয়ে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করছে জেলা ট্রাফিক পুলিশ।

সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো ও মোটরসাইকেলে দুইজনের অধিক আরোহী যাত্রী বহন ও হেলমেট না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট গাড়ির কাগজপত্র, ফিটনেস, ইন্স্যুরেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন পেপার, ট্যাক্স টোকেন এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে ট্রাফিক। এগুলো না থাকলে মামলা ও জরিমানা হয়ে থাকে। কুমিল্লায় কর্মরত ট্রাফিক বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জনগণ আইন ও জরিমানার বিষয়ে জানলেও তা মানার ব্যাপারে বেশ উদাসীন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা কমাতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, ওভারটেকিং, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো এসব বিষয়ে কঠোর না হলে কিছুতেই সড়ক নিরাপদ হবে না। মৃত্যু হ্রাস ও দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে আইনের আওতায় আসার অভ্যাস গড়া এবং নিয়ম মানার জন্যই মূলত ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাফিক আইন বা রোড সিগন্যাল না মানলে মামলা হবে এটাই স্বাভাবিক।

কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল জানান, সড়কে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা অত্যধিক বেড়েছে। তবে এক্ষেত্রে কিশোর ও উঠতি বয়সের ছেলের সখ মেটাতে বা বায়নার কারণে পিতা-মাতা বাইক কিনে দিচ্ছেন। অভিভাবক যদি সচেতন না হয় তবে মামলা দিয়ে বা জরিমানা করে সড়কে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন একথা আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত। কিন্তু যেভাবে মোটরগাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মোটরগাড়ি চালানোর আইন-কানুন না জানা কিংবা আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতাই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। সড়কে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মোটরযান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা গেলে শৃংখলা আসবে এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানীও কমে যাবে।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের প্রধান পরিদর্শক (টিআই) এমদাদুল হক বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। গত ১১ মাসে ১ হাজার ৭১২টি মামলায় ৬১ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এতে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে। দুর্ঘটনা রোধে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। কাউকে হয়রানি ও অর্থদন্ড করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের অভিযান নয়। তিনি আরো বলেন, নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজটে আটকা পড়ে মানুষের কর্মঘণ্টার ক্ষতি হয়। এমন দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় এনে যানজটের ১১টি কারণ উদঘাটন করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ডিভাইডার স্থাপন করা হয়েছে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ, জনসচেতনতা এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান