কৃষিঋণের লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ ৭ ব্যাংক

২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি খাতে ২০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। এই অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ৭ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় অগ্রণী ব্যাংক ও বিডিবিএল কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। যদিও সার্বিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ফার্মার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া বিদেশি মালিকানার ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান কৃষি খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় ৮টি ব্যাংকের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। বছর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার এসব ব্যাংক ৯ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১০৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে অগ্রণী ব্যাংক ও বিডিবিএল। গত অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণে অগ্রণী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬০ কোটি টাকা। বছর শেষে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৬৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিডিবিএলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। তবে বছর শেষে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মাত্র ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য ৪৩৩ কোটি টাকা। বেসরকারী ও বিদেশি ব্যাংকগুলো আলোচ্য সময়ে ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

আলোচ্য অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ফার্মাস ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৫ কোটি টাকা। বছর শেষে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মাত্র ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মধুমতি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মাত্র ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার ৭২ দশমিক ০৪ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৬০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ০৬ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি মালিকানার ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান কৃষি খাতে ৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বছর শেষে তারা কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তৎপরতার কারণেই সার্বিকভাবে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কৃষিঋণের বিতরণ বেড়েছে। তবে যেসব ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ১৯ হাজার ৫৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। যা গেল অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করার কারণ হিসেবে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, আগেই আমরা ২৫ ভাগ কৃষিঋণ বিতরণ করেছি। যা হিসাবে আসেনি। আমরা ভেবেছিলাম, সেগুলোও ধরা হবে। আগের বছর যে ঋণ বিতরণ করেছি, সেগুলো বাদ পড়েছে। তবে আগামী বছরে আমাদের কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।

সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ২৫ জুলাই ২০১৭