খাতুনগঞ্জে ঈদুল আজহার অত্যাবশকীয় পণ্য মসলার দাম আরো কমেছে

ঈদুল আজহাকে ঘিরে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের হলেও এবার কোরবানের অত্যাবশকীয় পণ্য মসলার দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ^বাজারে দাম বাড়তি থাকার পরও দেশের বৃহত্তম পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে দাম কমতির দিকে রয়েছে। কারণ করোনার প্রভাবে বেচাকেনা খুবই কম। প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
ঈদুল আজহার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের মসলা এবং আদা, রসুনও পেঁয়াজের দাম ক্রমেই কমছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের মসলার দাম কমে গেছে।
মসলা আমদানিকারক চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বাসসকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর গত তিনমাস ধরে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম অব্যাহতভাবে কমছে। বিশ^বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বেচাকেনা করতে হচ্ছে। এ অব¯া’ আর কয়েক মাস স্থায়ী হলে টানা লোকসানে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গুয়েতেমালা থেকে আমদানিকরা ভালো মানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৪শ’ টাকা দরে। গত সপ্তাহে ২৫৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। ১৫-২০দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২৬৫০ টাকা দরে। মধ্যমানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকায়। কয়েকদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২৪৫০ টাকা দরে। করোনা সংক্রমণের আগে অর্থাৎ তিনমাস আগে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এলাচ আমদানি হয় গুয়েতেমালা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর থেকেও এলাচ আমদানি করা হয়। তবে এসব দেশ এলাচ উৎপাদন করেনা। অন্য দেশ থেকে এনে রপ্তানি করে।
ভারতীয় জিরা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৪০-২৫০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে ৩৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ১৫-২০ দিন আগেও জিরা বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকায়। আর রোজায় দাম ৪৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সিরিয়া থেকে আমদানি করা জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগে ৩৬৫ টাকায়ি বক্রি হয়েছিল। রোজায় ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মিষ্টি জিরা ১০০ টাকা থেকে কমে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে পণ্যটি বেশি আমদানি হয়। ভারত, সিরিয়া, রাশিয়া, চীন থেকে বেশি জিরা আমদানি হয়।
লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬৩০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে ৬৬০-৬৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। রমজান মাসে ৭২০টাকা দরে বিক্রি হয়। লবঙ্গ আমদানি হয় শ্রীলংকা, ভারত ও চীন থেকে। জায়ফল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩৫০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গত মাসে বিক্রি হয় ৬৫০টাকায়। রোজায় বিক্রি হয়েছিল ৭০০ টাকায়। জায়ফল আমদানি বেশি হয় ভারত ও চীন থেকে। তবে আরও কয়েকটি দেশ থেকে জায়ফল আমদানি করা হয়।
দারুচিনি বেশি আমদানি হয় চীন থেকে। গতকাল দারুচিনি বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ২৬০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল ২৭৫ টাকা দরে। গত মাসে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
যত্রিক বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২২৫০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২৬০০-২৭০০ টাকা দরে। রোজায় বিক্রি হয় ২৯০০ টাকায়। যত্রিক বেশি আমদানি হয় শ্রীলংকা থেকে।
গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩৭০ টাকায়। কিছুদিন আগেও ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গোলমরিচ আমদানি হয় ভারত ও শ্রীলংকা থেকে। বর্তমানে ভারতীয় গোলমরিচের চাহিদা বেশি। ধনিয়া কেজিতে ৭৫ টাকা থেকে কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
ভারত থেকে আমদানি করা লালমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। কয়েকদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকা দরে। রমজান মাসে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি লালমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা দরে। কিছুদিন আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রমজানে বিক্রি হয় ২৪০ টাকা দরে।
গরম মসলা ছাড়াও কমেছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জাবেদ ইকবাল বাসসকে বলেন, ‘অন্যান্য বছর ঈদুল আজহার এ সময়ে প্রচুর বেচা-বিক্রি ছিল। এ বছর নেই বললেই চলে। অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছি। আমদানি বেশি থাকলেও বাজারে ক্রেতা কম। এসব কাঁচাপণ্য বেশিদিন মজুদ রাখা যায়না। বেচাকেনা কম হওয়ায় পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম কমতির দিকে রয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এসময়ে যেসব পণ্য বন্দওে আসছে সেসব দেড় মাস আগের এলসি করা। এসব পণ্যে ভ্যাট আরোপ হয়নি। এছাড়াও আমদানি বেশি রয়েছে। সেই তুলনায় ক্রেতা কম। তাই দাম পড়তির দিকে।’
ভারতীয় আমদানি করা ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২০-২১ টাকায়। মধ্যম মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫টাকা দরে। আদা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১১০-১১৫ টাকায়। কয়েকদিন আগে ছিল ১২০ টাকা। গতমাসে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫টাকা দরে। রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬২ টাকা দরে। গত মাসে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়বিক্রি হয়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণসম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, করোনার প্রভাবে ঈদুল আজহায় মসলা জাতীয় পণ্যের দাম আর বাড়বেনা। বেচাকেনা কম থাকায় প্রতিটি পণ্যের দাম এখন কমতির দিকে।