ঘরে ঘরে বীমা সেবা পৌছে দেয়াই চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড এর অঙ্গীকার

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা কমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যারা বীমা শিল্পের সাথে জড়িত, আপনারা জানেন বীমাশিল্পে লাইফ এবং নন লাইফ দুটো ভাগ আছে। আমি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একটি কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করছি। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুলো, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের পরিবর্তন পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে মাঝখানে, আমাদের যে অসুবিধা তৈরি হয়েছিল। আপনারা জানেন আমাদের বীমা শিল্পে পলিসি গ্রহীতাদের কাছে যেতে হয়। আসলে ফিজিক্যালি না গেলে পলিসি ক্লোজ হয়ে যায়। করোনার কারণে যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা সামাজিক দূরত্বের কারণে আমরা কিন্তু মুভমেন্ট করতে পারিনি।

বর্তমানে সেই পরিস্থিতি থেকে যেহেতু ওভারকাম হয়ে এসেছি। আমাদের সকল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এখন প্রস্তুত হচ্ছি। যাতে করে এই কোভিড মোকাবেলা করে, আমরা সামনের দিনগুলোতে মাঝখানের ব্যবসার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুনর্জীবিত করতে পারি।

চ্যালেঞ্জ এর কথা বলতে গেলে। এটা তো আসলে সামগ্রিকভাবে বিষয়টাকে দেখতে হয়। কারণ হল আমরা আমাদের পলিসি গ্রহীতার কাছে যাচ্ছি। বারবার তাদের সঞ্চয় খরচ করে এত দিন চলেছে। সুতরাং পলিসি করতে গেলে তারা কিন্তু পলিসির টাকা পাওয়ার অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। আবার এমনও দেখা গেছে এর বিপরীতটাও ঘটেছে, অনেক গ্রাহক পলিসি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

আমরা আমাদের লাইফের রিস্ক এর ব্যাপারে এতদিন যে অবহেলা করেছি। সেই অবহেলাকে ওভারকাম করে মানুষ কিন্তু এখন পলিসি নিচ্ছে।

আপনারা জানেন, সরকারের ২০১০ সালের বীমা আইন অনুযায়ী প্রতিটি বীমা কোম্পানি বিশেষ করে নতুন কোম্পানি গুলো লাইসেন্স পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে লিস্টেড হওয়ার একটা নির্দেশনা আছে। কিন্তু আমাদের যে বীমা ব্যবসায় আপনারা দেখে থাকবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রচুর বীমা কোম্পানি এর মধ্যে এসে গেছে। সে অনুযায়ী আমরা বীমা ব্যবসার প্রসার করতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে দেখা গেছে তিন বছরের মধ্যে একটা বীমা কোম্পানি তার লাইফ ফান্ড পজিটিভ এবং তার সারপ্লাসে আসাটা অযৌক্তিক ভাবে সক্ষম হতে পারে না। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের নতুন যে চৌদ্দটা কোম্পানি,  তার মধ্যে একটি মাত্র কোম্পানি এই সক্ষমতা দেখিয়েছে।

আমাদের কোম্পানি বর্তমান অবস্থায় অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়েছি। সেটা পর্যালোচনাক্রমে আছে। বাকি বারোটি কোম্পানি এখনো আসতে পারিনি। পুরনো আঠারোটি কোম্পানির মধ্যে, এখনো কিন্তু চারটি কোম্পানি তালিকা ভুক্ত হয়নি। আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন দ্রুত পুঁজিবাজারে আসার জন্য। সেই প্রেক্ষাপটেই আমরা নিজেদের ব্যবসা আরো প্রসারিত করার জন্য যখন উদ্যোগটা নেয়ার কথা ভাবছি। তখনই কিন্তু এই মহামারী পরিস্থিতির কারণে সেই অবস্থানে যেতে পারিনি। যার ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে বিলম্ব হচ্ছে।

আমি এখানে প্রায় আড়াই বছর আগে জয়েন করি এবং জয়েন করার পরে বিভিন্ন ধরনের রিফর্ম, আইডিআরের নির্দেশনা, সরকারি যত রকমের কমপ্লায়েন্স মেনে চলার পেক্ষাপটে আমাদের একটা পরিবর্তন এসেছে। ইনশাআল্লাহ গত দুই বছর ব্যবসাকে তিনগুণে রূপান্তর করতে পেরেছি। আমরা আসলে মূল ফোকাসি দিয়েছি দক্ষ মানব গোষ্ঠীর উপর। সেজন্য আমাদের প্রতি মুহূর্তে ট্রেনিং চলছে এবং ট্রেনিং এর মাধ্যমে আমাদের যে ফিল্ড ফোর্স আছে, ফাইনান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট ইউনিট ম্যানেজার এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। তাদেরকে আমরা সঠিকভাবে তৈরি করছি। সেই পরিক্রমায় ১৩ই সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় এবং ফেনীতে দুটো ব্রাঞ্চ উদ্বোধন হবে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ নোয়াখালীতে দুটো ব্রাঞ্চ উদ্বোধন হবে।

বীমা আসলে রিস্ক প্রটেকশন দেয়। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে উন্নত বিশ্বের দেশ হবে। উন্নত দেশে কিন্তু এই বীমা সামগ্রিকভাবে সরকার তার জনগণকে প্রটেকশন দিয়ে থাকে। কিন্তু আমদের বীমার ব্যাপারে অসচেতনতা আছে। আমরা আমাদের অবস্থান সেই ভাবে তৈরি করতে পারিনি। আমাদের বর্তমান সরকার বুঝতে পেরেছে ডাবল ডিজিট জিডিপি এনসিওর করতে হলে। বীমা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সেই প্রেক্ষাপটেই বীমাকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। আমি গত বছর একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। এই কোভিড পিরিয়ডে আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে। ঘরে ঘরে এই জীবন বীমা কে পৌঁছে দেওয়া। ঘরে ঘরে যদি আমরা জীবন বীমা কে পৌঁছে দিতে পারি। তাহলে মানুষের রিস্ক প্রটেক্টেড থাকবে সঞ্চয়ের প্রটেকশন আসবে। শিক্ষা বীমা করলে শিক্ষার প্রটেকশন আসবে। পেনশন থেকে সুবিধা পাবে। স্বাস্থ্য বীমা নিলে স্বাস্থ্যের প্রটেকশন পাবে। নিজের সঞ্চয়ের কোন ক্ষতি হবে না। সঞ্চয়ের ক্ষতিটা কিন্তু ইন্সুরেন্স ও রি- ইনস্যুরেন্স পূরণ করবে। তেমনি ভাবে রাষ্ট্রের যত কার্যক্রম আছে। যেমন এখন বড় বড় শিল্প হচ্ছে, সেতু হচ্ছে,এগুলোর নিরাপত্তা রিস্ক প্রটেকশন কিন্তু বীমার মাধ্যমে হয়ে থাকে।  আপনারা এখন দেখছেন সাধারণ বীমা বা যেগুলো নন-লাইফ। তারা কিন্তু এগ্রিকালচার ইন্সুরেন্স বা ক্রপ ইন্সুরেন্স এর দিকে নজর দিয়েছে। তাহলে বন্যায় যে, আমাদের কৃষকদের ক্ষতি হয়ে যায়, বীমা কিন্তু এই ক্ষতির প্রটেকশন দেবে। তাহলে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্র তার প্রটেকশন নিশ্চিত করতে পারে। আমরা যেহেতু উন্নত বিশ্বের দেশে যেতে চাই। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন প্রটেকশন নিশ্চিত করা। এই রিস্ক প্রটেকশন নিশ্চিত করতে গেলে আমাদের দুটো জিনিস দরকার।

একটা হচ্ছে আমাদের বীমাকে সহজ করে দিতে হবে। অর্থাৎ এই সার্ভিসটা সবার কাছে এভেলেবেল হবে। আমাদের অতীতে যে গল্প ছিল বীমা করে টাকা হারিয়ে যায়। এখন কিন্তু আমাদের ব্যাংকিং চ্যানেল স্ট্রং হওয়াতে টাকা আর হারায় না।

দ্বিতীয় যে সমালোচনা ছিল বীমা করলে টাকা পেতে অনেক সময় লেগে যায়। আমরা বর্তমানে অ্যাপস ডিজিটালাইজেশন পোর্টাল, অনলাইন এক্টিভিটিস এর মাধ্যমে, পেপারলেস প্রসেস এর মাধ্যমে সার্ভিস দিচ্ছি।

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এই তিন,চার গুন ব্যবসায় এগিয়ে যাওয়ার মূল বিষয়টি হচ্ছে। আমরা প্রম্প সার্ভিস নিশ্চিত করছি। বীমা গ্রহীতারা তাদের অ্যাপসে দেখছে, পোর্টালে দেখছে, কবে ক্লেইম পাবে, কখন পলিসি মেচিউড হবে। গ্রাহক নিজেই কিন্তু অত্যন্ত ট্রান্সপারেন্সির মাধ্যমে এটা বুঝতে পারছে। তাহলে এই দুটো সেবা যখন নিশ্চিত করতে পারব। তখন মানুষের মধ্যে একটা ট্রাস্টেড জায়গা তৈরি হবে। এর সাথে যদি আমরা প্রোডাক্ট ডাইভারসিটি আনতে পারি, যেমন বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রোডাক্ট স্বাস্থ্য বীমা, পেনশন বীমা। যেহেতু সরকারি ক্ষেত্রে পেনশন আছে প্রাইভেট সেক্টরে পেনশন, ইনসুরেন্স কোম্পানি ইনসিওর করতে পারবে। এরপর বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প, দেনমোহর বীমা, হতে পারে এই যে বিভিন্ন ডাইভারসিটি প্রোডাক্ট আমরা যদি নিয়ে আসতে পারি মানুষের কাছে। তাহলে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হবে, তারা সঞ্চয়ী হবে তার সঞ্চয়ের পোর্টফোলিও একটা পার্ট তারা ইনসুরেন্সে জমা দিবে। ইন্সুরেন্স এর মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে যে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। তার মাধ্যমে প্রাইভেট সেক্টর থেকেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে করে মানুষের মধ্যে বীমার আস্থার জায়গা তৈরি হয়, সেবার জায়গা তৈরি হয় এবং সেই সাথে ওয়ার্ড অফ মাউথ এর মাধ্যমে আমাদের ঘরে ঘরে এই জীবন বীমা পৌঁছে যায়। এটাই চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিকল্পনা। চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্স এই স্বপ্নই বিশ্বাস করে।

বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য দুটো জিনিস অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রথমত হচ্ছে সঠিক নীতি। কারণ সঠিক নীতি না আসলে, যেমন আপনি যদি ইউরোপে যেতে চান, তাহলে এম, বি, সি আপনাকে বলবে আপনার একটা ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক। আপনাকে ট্রাভেল ইন্সুরেন্স করে নিতে হবে। অতীতে যেমন আপনি গাড়ি কিনলে গাড়ি ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক ছিল। তাহলে ইন্স্যুরেন্সকে যদি আমরা সঠিক নীতির মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করি। আপনি দেখেছেন গতবছর সরকার প্রবাসী বীমা বাধ্যতামূলক করেছে। এখন শিক্ষা বীমা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে। এভাবে যদি শিক্ষা,স্বাস্থ্য প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে জীবন বীমা করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই নীতি আছে সেটা এনফোর্সমেন্ট করতে হবে। সরকার যদি এনফোর্স করে, তাহলে এই বীমা সকলের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ আছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে নীতি তো আছেই, এই নীতি এনফোর্সমেন্ট করতে গেলে জনগণকে জানাতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ মানুষকে জানাতে হবে বীমার উপকারিতা। এই কাজ শুধু নীতিনির্ধারকরা করে না এটা আপনারা করবেন। আপনারা যারা মিডিয়া কর্মী আছেন। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জনগণকে বীমা সুবিধা জানাবো। আমি যদি আমার প্রতিষ্ঠানে বসে বলি জীবনবীমা ভালো তাহলে মানুষ তো জানবে না। মানুষকে জানাবার জন্য আপনাদের মত মিডিয়ার, প্রিন্ট ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াকে প্রয়োজন। যাদের মাধ্যমে বীমার ভালো দিকগুলো মানুষকে জানানো যায়। পত্রিকা খুললেই বীমার অনেক নেগেটিভ নিউজ দেখতে পাই। এই নিউজ এর কারণে মানুষ কিন্তু আরো শংকিত হয়ে যাবে। এই নিউজ গুলো আপনারা আমাদের জানান ট্রান্সফারেন্সি ইনসিওর করেন। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে যদি বীমার সঠিক দিক গুলো যেমন মানুষ কেন বীমা করবে ?এই অ্যাওয়ারনেস গুলো আমরা যে ভালো ভালো কাজগুলো করেছি,সেগুলো যদি অনেক বেশি প্রচারিত হয় যারা খারাপ করছে, তারা এই প্রচারনা দেখে লজ্জা পাবে এবং বিরত থাকবেন ও ভালো কাজের জন্য কম্পিটিশন তৈরি হবে। সকল কোম্পানি তখন ভালো কাজ করার চেষ্টা করবে। তখন মানুষের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে। এই কাজের মাধ্যমেই বীমার উন্নয়ন সম্ভব হবে। বিদেশে পলিসি ও অ্যাওয়ারনেস এই দুটোর মাধ্যমেই ইন্সুরেন্স জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদেরকেও তাই করতে হবে।

এস এম জিয়াউল হক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্সে কোম্পানি লিমিটেড