চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ৫৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল

চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, গতকাল শনিবার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে নগরীর সাতটি ল্যাবে চট্টগ্রামের ৭৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন শনাক্ত ৭২ বাহকের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩৮ জন এবং নয় উপজেলার ৩৪ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ পটিয়ায় ২০ জন, সীতাকু-ে ৫ জন, মিরসরাই ও চন্দনাইশে ২ জন করে এবং সন্দ্বীপ, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও বাঁশখালীতে ১ জন করে রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩২ জন। সংক্রমিতদের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪২ হাজার ৯১৪ জন ও গ্রামের ১১ হাজার ১১৯ জন।
গতকাল করোনায় মহানগরী এলাকার এক পুরুষ রোগী মারা যান। ফলে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৬২৬ জন হয়েছে। এর মধ্যে শহরের ৪৪৮ জন ও গ্রামের ১৭৯ জন। সুস্থতার সনদ দেয়া হয় ৪২৪ জনকে। ফলে জেলায় মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪২ হাজার ৬৫২ জনে। এদের ৫ হাজার ৯২২ জন হাসপাতালে ও ৩৬ হাজার ৭৩০ জন বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে গতকাল যুক্ত হন ৩৫ জন ও ছাড়পত্র নেন ৪৫ জন। বর্তমানে ১ হাজার ৯২ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল আক্রান্তের প্রায় ৬ গুণ বেশি মানুষ আরোগ্যলাভ করেছেন। শহর ও গ্রামে আক্রান্তের পাল্লাও প্রায় সমান। নতুন আইসোলেশনের বেশি রোগী করোনামুক্তির ছাড়পত্র নেন। তবে, টানা দু’দিন কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু না হলেও গতকাল একজন মারা যান।
এদিকে, এবারও নয় দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ ২৭ মে ৮২ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হলে জেলায় মোট আক্রান্ত ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণ হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর আগে ১৮ মে এগারো দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিত ৫২ হাজার পাড় হয়। ৫১ হাজার অতিক্রম করে ৭ মে ১৩৬ জনের সংক্রমণের মধ্য দিয়ে। সেবার সাত দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়। ৩০ এপ্রিল ১৮৫ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯০ জনে। এর আগে চার দিনে ২৫ এপ্রিল ৪৯ হাজার অতিক্রম করে। এদিন চট্টগ্রামে ২০৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হয়ে মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৫ জনে। ২১ এপ্রিল ২৭৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হলে করোনা রোগীর সংখ্যা তিন দিনে ৪৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় (৪৮ হাজার ১৩৯ জন)। ১৮ এপ্রিল ৪৭ হাজার অতিক্রম করে চার দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। দুই দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট আক্রান্ত ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ এপ্রিল। তিনদিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে ১২ এপ্রিল জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ২৯১ জনে। এর আগে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করেছিল ৯ এপ্রিল। এ সময়ে পরপর পাঁচবার তিনদিনে করোনা রোগীর হাজারপূর্তি হয়। ৪৩ হাজার পার হয় ৭ এপ্রিল ও ৪২ হাজার অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল। ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। অথচ, ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ, পাঁচ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৩২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শহরের ৮ ও গ্রামের ৭ জনের রেজাল্ট পজিটিভ আসে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৮১ টি নমুনা পরীক্ষা করলে গ্রামের ৩ টিসহ ১৪ টিতে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ ৩৪ নমুনার মধ্যে গ্রামের ৩ ও শহরের ৫ টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় পটিয়ারই ২০ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব শেভরনে ২২০ টি নমুনা পরীক্ষা করে গ্রামের একটিসহ ৪ টিতে, মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৩ টি নমুনার মধ্যে শহরের ৬ টিতে এবং মেডিকেল সেন্টারে ৯ টি নমুনায় শহরের ২ টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ও বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। চট্টগ্রামের কোনো নমুনাও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, চমেকে ১৭ দশমিক ২৮, আরটিআরএলে ৩২ দশমিক ৩৫, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৮ দশমিক ৭৮, শেভরনে ১ দশমিক ৮২, মা ও শিশু হাসপাতালে ১৮ দশমিক ১৮ এবং মেডিকেল সেন্টারে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।