চট্টগ্রামে করোনায় ৬ রোগীর মৃত্যু

চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় নতুন ৪৭৩ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। সংক্রমণ হার ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এদিকে, জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ হাজার অতিক্রম করেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, নগরীর আটটি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের ২ হাজার ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ৪৭৩ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩৯০ জন ও উপজেলার ৮৩ জন। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৪৩ হাজার ১৮৮ জন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩৪ হাজার ৫৮৪ জন ও গ্রামের ৮ হাজার ৬০৪ জন।
গতকাল করোনায় আক্রান্ত ৬ রোগীর মৃত্যু হয়। ফলে মৃতের সংখ্যা এখন ৪০৬ জন। এতে শহরের বাসিন্দা ২৯৯ জন ও গ্রামের ১০৭ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন নতুন ৬৬ জন। ফলে মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫৪৬ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৬৯৬ জন ও বাসায় থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ২৯ হাজার ৮৫০ জন। হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ৪০ জন ও ছাড়পত্র নেন ২০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ২৮৪ জন।
উল্লেখ্য, গতকাল করোনায় আক্রান্ত সর্বোচ্চ ৬ জন মারা যান। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনে ১৭ জন মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৪ জন মারা যান ৩ এপ্রিল। অন্যদিকে, টানা তৃতীয়দিনের মতো নতুন আক্রান্তের সংখ্যা চারশ’র বেশি শনাক্ত হয়েছে। সোমবার ৪৯৪ জন ও মঙ্গলবার ৪১৪ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এদিন ৩ রোগীরও মৃত্যু হয়। ২ এপ্রিল ছাড়া প্রতিদিনই এক বা একাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণও এ মাসের প্রথম দিন, ৫১৮ জন।
এদিকে, এবারও মাত্র তিনদিনে করোনা রোগী এক হাজার পূর্ণ হয়। এ নিয়ে পরপর তিনবার তিনদিনে করোনা রোগীর হাজারপূর্ণ হলো। এর আগে ৪২ হাজার পার করেছিল ৫ এপ্রিল। ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। ফলে সর্বশেষ তিনবার দ্রুততম সময়ে এক হাজার পূর্ণ হলো। অথচ ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ, পাঁচ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে । ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল। অথচ তার আগে ৯ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করে গত ১৫ জানুয়ারি। আট দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় মোট শনাক্ত রোগী ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ২১ ডিসেম্বর মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার অতিক্রম করে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ ডিসেম্বর।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে ৮৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ১২ জনসহ ৮৮ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৫২৩ জনের নমুনার মধ্যে ২৩ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে শহরের ৪৩ জন ও গ্রামের ৩৬ জনের শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলে। ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২৭৩টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ২১টিসহ ১১৬টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ পরীক্ষিত একমাত্র নমুনাটির পজিটিভ রেজাল্ট আসে।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব শেভরনে ৩১৮ নমুনা পরীক্ষা করা হলে গ্রামের ১১টিসহ ৭০টি, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ২০২টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ২টিসহ ৭৬টি এবং মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ৫৩টি নমুনায় গ্রামের ১ টিসহ ২০ টিতে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এদিন চট্টগ্রামের ২ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় দু’টিরই ফলাফল নেগেটিভ আসে।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে বিআইটিআইডি’তে ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ, চমেকে ৪ দশমিক ৪০, চবি’তে ৫১ দশমিক ৩০, সিভাসু’তে ৪২ দশমিক ৪৯, আরটিআরএলে শতভাগ, শেভরনে ২২ দশমিক ০১, ইম্পেরিয়ালে ৩৭ দশমিক ৬২, মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৭ দশমিক ৭৩ এবং কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবে ০ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।