চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়ালো

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টে আরো ৪৯৪ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন। সংক্রমণ হার ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, নগরীর আটটি ল্যাবে গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের ২ হাজার ৫৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ৪৯৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪৩৯ জন ও এগারো উপজেলার ৫৫ জন। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৪২ হাজার ৩০১ জন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩৩ হাজার ৮২১ জন ও গ্রামের ৮ হাজার ৪৮০ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ১৫ জন, রাউজানে ১২ জন, ফটিকছড়িতে ১০ জন, পটিয়ায় ৫ জন, সীতাকু- ও বোয়ালখালীতে ৩ জন করে, রাঙ্গুনিয়া ও মিরসরাইয়ে ২ জন করে এবং লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারায় ১ জন করে রয়েছেন।
গতকাল করোনায় একজন মারা যান। মৃতের সংখ্যা এখন ৩৯৬ জন। এতে শহরের বাসিন্দা ২৯১ জন ও গ্রামের ১০৫ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন নতুন ৬৬ জন। ফলে মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪১০ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৬৭০ জন এবং বাসায় থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ২৯ হাজার ৭৪০ জন। হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে যুক্ত হন ৩৫ জন ও ছাড়পত্র নেন ২০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ২৫৯ জন।
উল্লেখ্য, গতকাল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চট্টগ্রামে একদিনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম ভাইরাসবাহক শনাক্তের পর গত ১ এপ্রিল করোনাকালের সর্বোচ্চ ৫১৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ হার ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ে এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। ২ এপ্রিল মার্চ ৪৬৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এটি চট্টগ্রামে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। করোনার প্রথম প্রকোপের সময় গত বছর ৩০ জুন আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে সর্বোচ্চ ৪৪৫ জন পর্যন্ত ওঠেছিল।
এদিকে, এবারও মাত্র তিনদিনে করোনা রোগী এক হাজার পূর্ণ হয়। এর আগে ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। দুই বারই দ্রুততম সময়ে এক হাজার পূর্ণ হলো। ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ। সেদিন ২৮৭ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং ২ রোগীর মৃত্যু হয়। সেবার এক হাজার পূর্ণ হতে সময় নেয় পাঁচ দিন। ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল। অথচ তার আগে ৯ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করে গত ১৫ জানুয়ারি। আট দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় মোট শনাক্ত রোগী ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ২১ ডিসেম্বর মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার অতিক্রম করে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ ডিসেম্বর।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে ৮৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৯ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৬৬০ জনের নমুনার মধ্যে গ্রামের ২ জনসহ ৮৭ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে শহরের ৫৪ জন ও গ্রামের ৩৭ জনের দেহে করোনার ভাইরাস থাকার প্রমাণ মিলে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২৪৭টি নমুনায় গ্রামের ৬টিসহ ৫৬টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ ৪৯ টি নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ১টিসহ ১৯টির রেজাল্ট পজিটিভ আসে।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব শেভরনে ২৭৯টি নমুনা পরীক্ষা হলে গ্রামের ৬টিসহ ৯১টিতে, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ২০৪টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ২টিসহ ৭৪টিতে এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৪৯টি নমুনায় গ্রমের ১ টিসহ ১৭টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এদিন, চট্টগ্রামের কোনো নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ, চমেকে ১৩ দশমিক ১৮, চবি’তে ৪৩ দশমিক ১৩, সিভাসু’তে ২২ দশমিক ৬৭, আরটিআরএল-এ ৩৮ দশমিক ৭৭, শেভরনে ৩২ দশমিক ৬২ শতাংশ, ইম্পেরিয়ালে ৩৬ দশমিক ২৭ এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।