চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে মাদ্রিদের বিপক্ষে সিটির জয়

নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যকার হাই ভোল্টেজ সেমিফাইনালের প্রথম লেগেম ম্যাচটি।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সাত গোলের এই ম্যাচে অবশ্য শেষ হাসি হেসেছে স্বাগতিক ম্যানচেস্টার সিটি। মঙ্গলবারের ম্যাচটিতে তারা ৪-৩ গোলে পরাজিত করেছে ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন্স রিয়াল মাদ্রিদকে।

কেভিন ডি ব্রুইনা, গাব্রিয়েল জেসুস, ফিল ফোডেন ও বার্নান্ডো সিলভার গোলে পেপ গার্দিওলার দলের জয় নিশ্চিত হয়। তিনবার দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও গোল হজম করতে হয়েছে সিটিজেনদের। করিম বেনজেমার জোড়া গোলের সাথে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলে মাদ্রিদ তাদের লড়াই টিকিয়ে রাখলো। আগামী ৪ মে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আরো একটি দুর্দান্ত ম্যাচের অপেক্ষায় থাকবে পুরো ফুটবল বিশ্ব। স্বাগতিক হিসেবে মাদ্রিদ জয় নিয়েই তাদের সমর্থকদের বাড়ি ফেরাতে আশাবাদী।

মাত্র ৯ দিন আগেই ইতিহাদ স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা দৌড়ে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের সাথে দুইবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল সিটি।

সেই ম্যাচে জিততে পারলে লিগ শিরোপা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যেত। কালও প্রায় সেই একই ধরনের সুযোগ হাতছাড়া করায় দলের গার্দিওলার মনে কিছুটা হলেও হতাশার জন্ম হয়েছে। সিটি যেভাবে ম্যাচ শুরু করেছিল তাতে আধাঘান্টার মধ্যে ৪-০ গোলে এগিয়ে গেলেও অবাক হবার কিছুই থাকতো না। কিন্তু একের পর এক সুযোগগুলো মিস হওয়াতে বড় জয়ের দেখা পায়নি।

ম্যাচ শেষে গার্দিওলা বলেছেন, ‘আমি খেলোয়াড়দের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি যে আজ যেভাবে আমরা ম্যাচ জিতেছি সেই একই মানসিকতা নিয়েই আমরা সান্তিয়াগোতে যেতে চাই। এক বা চার গোলে জয়ী কোন ব্যপার না। বার্নাব্যুতে দেখাতে হবে আমরা কি, নতুবা সেখানে কোন সুযোগ নেই। এটা আমাদের জন্য দারুন একটি পরীক্ষা।’

রেকর্ড ১৩ বারের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন মাদ্রিদ এ নিয়ে ৩০ বারের মত সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, বিপরীতে সিটি খেলছে তৃতীয় ম্যাচ। কিন্তু তারপরেও ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা ম্যাচের শুরুতেই ফেবারিটের তকমা গায়ে লাগিয়ে মাঠে নেমেছিল। ম্যাচ শুরুর মাত্র ৯২ সেকেন্ডের মধ্যে রিয়াদ মাহারেজের নিখুঁত একটি ক্রস থেকে ডি ব্রুইনার হেডে মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া পরাস্ত হন। তখনো মাদ্রিদ নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি। ১০ মিনিট পর ডি ব্রুইনার ক্রস ধরতে ব্যর্থ হন ডেভিড আলাবা, এই সুযোগে ব্যবধান দ্বিগুন করেন গাব্রিয়েল জেসুস।

মাদ্রিদ বস কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘আমাদের শুরুটাই বাজে ছিল। সিটির প্রচেষ্টাগুলো আটকানোর ব্যপারে আমাদের কোন চেষ্টাই ছিলনা। কিন্তু তারপরই পুরো দল নড়েচড়ে বসে।

সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে তারা বিভিন্ন ম্যাচে ফিরে এসেছিল তারই ঝলক আরো একবার দেখিয়েছে খেলোয়াড়রা। আমাদের আরো ভালভাবে প্রতিরোধ করা উচিত ছিল। দ্বিতীয় লেগে আমরা ভালভাবে প্রতিরোধ করতে পারলে জয় নিশ্চিত, আর সেটা না হলে বিদায় নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

স্প্যানিশ জায়ান্টরা কাল কাসেমিরোকে বিশ্রামে রেখে খেলতে নেমেছিল। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে একের পর এক কাউন্টার এ্যাটাকে খেলে গেছে সিটি। ডি ব্রুইনার দুর্দান্ত একটি পাস থেকে ফিল ফোডেন ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি হাতছাড়া করেন। ফোডেন ক্রসের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও মাহারেজ স্বার্থপরের মত নিজেই শট নিতে গেলে তা সফল হয়নি। আগের দুই রাউন্ডে পিএসজি ও চেলসির বিপক্ষে মাদ্রিদকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলা বেনজেমা কাল আরো একবার নিজের জাত চিনিয়েছেন। ৩৩ মিনিটে ফারলান্ড মেন্ডির ক্রসে দুর্দান্ত এক গোলে মাদ্রিদের আশা জাগিয়ে তুলেন এই ফরাসি তারকা। মৌসুমে এটি তার ৪০তম গোল।

বেনজেমা বলেন, ‘আমরা কখনই ম্যাচ ছেড়ে দেইনি। মাঝে মাঝে এভাবেই দু:সময়ের মধ্যেও নিজেদের টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করে যেতে হয় এবং আমরা সেটাই করে দেখিয়েছি। সিটি অসাধারন একটি দল, তাদের বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই কঠিন।’

বিরতির পর ম্যাচের নাটকীয়তা যেন আরো জমে ওঠে। কোর্তোয়াকে একা পেয়েও মাহারেজের বল পোস্টে লেগে ফেরত আসে, ফিরতি বলে ফোডেনর শট লাইনের উপর থেকে ক্লিয়ার করেন দানি কারভাহাল। প্রথমার্ধে ইনজুরিতে পড়া জন স্টোনসের স্থানে রাইট-ব্যাক হিসেবে খেলতে নামেন ফার্নান্দিনহো। সিটি অধিনায়কের কারনেই দুই মিনিটের মধ্যে দুই গোলের দেখা পায় ইতিহাদেও দর্শকরা। ৫৩ মিনিটে ফার্নান্দিনহোর এ্যাসিস্টে ফোডেন সিটিকে দুই গোলের লিড উপহার দেন। এরপর ৩৬ বছর বয়সী ফার্নান্দিনহো ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দ্রুততার কাছে আর পেলে উঠেননি। ৫৫ মিনিটে অনেকটা মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে দৌঁড়ে এসে ভিনিসিয়াস এডারসনকে পরাস্ত করেন। এক গোলে এগিয়ে থেকে সিটি আক্রমনের ধার বজায় রাখে।

আনচেলত্তিকে দেখে অবশ্য কোনসময়ই নার্ভাস মনে হয়নি। ৭৪ মিনিটে ডি বক্সের ঠিক আগে ওলেক্সান্দার জিনচেনকোকে ফাউল করা হলেও রোমানিয়ান রেফারি ইস্তভান কোবাসান খেলা চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। ঐ সময় রিয়ালের খেলোয়াড়দের দেখে মনে হয়েছে তারা ফাউলের কারনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই সুযোগে সিলভা কোনাকুনি শটে কোর্তোয়াকে বোকা বানান। এই গোলের পরপরই আবারো সিটি অল্পের জন্য গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ায় মাহারেজ লিড বাড়াতে পারেননি। কিন্তু ম্যাচ শেষের আট মিনিট আগে অমারিক লাপোর্তের হ্যান্ডবলে পেনাল্টি পায় মাদ্রিদ। বেনজেমা ঠান্ডা মাথায় গোল করে মাদ্রিদকে দ্বিতীয় লেগের জন্য টিকিয়ে রাখেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান