জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় অর্গানিক ফুড ল্যাব জরুরি

ইসহাকুল হোসেন সুইট, বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাসট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তোহফা এন্টারপ্রাইজের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণ এবং রফতানিতে রয়েছে তার দির্ঘ অভিজ্ঞতা । দেশীয় খাদ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন আজকের বাজার ও এবিটিভি’র সাথে। আলোচনার অনুলিখন তাঁর ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

আমাদের দেশটা কৃষিভিত্তিক। পৃথিবীর যেসব দেশ অর্থনীতিকে উন্নত করতে পেরেছে, তারা সবাই কৃষির মাধ্যমেই করেছে, কৃষি দিয়েই অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী করেছে। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি দিনে দিনে অনেক বড় হচ্ছে। আমাদের সরকার কৃষিবান্ধব। কৃষিকে উৎসাহ দিচ্ছে। অতীতে আমরা দেখেছি, কৃষক সার চাইতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু এখন একটি স্থিতিশীল সরকার রয়েছে, আমাদের কৃষক তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ন্যায্যমূল্যে পাচ্ছে; বীজ, সার, কীটনাশক হাতের নাগালে পাচ্ছে।

আমরা আগে খাদ্য ঘাটতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিলাম, কিন্তু এখন আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ নেই। তিন বছর ধরে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত রাখতে পারছি। সে কারণে আমরা খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছি। সরকার এখন পরিকল্পনা নিচ্ছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের চাল যেন বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি এবং একটা স্থিতিশীল সরকারের কারণে। আগে আমরা বলতাম মোর গ্রো ফুড, কিন্তু এখন আমরা বলব যে আমরা অর্গানিক ফুডের দিকে নজর দিতে চাই।
অর্গানিক ফুড ল্যাব জরুরি

এফবিসিআই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের এগ্রিকালচার প্রোমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা ও স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে। আমি এই কমিটির চেয়ারম্যান। পাশাপাশি আমরা আরেকটি কমিটি করেছি, এগ্রি বিজনেস নামে। আমরা সরকারের নজরে আনতে চেয়েছি অর্গানিক ফুডের ব্যাপারে।
আমরা জানি, বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, অর্গানিক ফুডের দাম বেশি। একটা অর্গানিক আপেলের দাম ৩ ডলার হলে একটা নরম্যাল আপেলের দাম পড়বে ১ ডলার। তবু মানুষ এ ধরনের খাবার কিনে খাচ্ছে।

আমাদের এখন এমন একটি ফুড ল্যাবের প্রয়োজন, যেখানে অর্গানিক ফুডের পরীক্ষা হবে। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে কোনো রকম ফাঁক-ফোকর ছাড়া অর্গানিক ফুড বাজারজাত করতে পারব, তিন গুণ দামে বিক্রি করতে পারব। তবে ফুড ল্যাব হতে হবে পরিবেশবান্ধব, সহজলভ্য। ফুড ল্যাব কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, একটি আলু আমাদের দেশে স্পেফিকেশন করতে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় খরচ অনেক বেশি। যেমন ইন্ডিয়াতে একটি আলু স্পেসিফিকেশন করতে খরচ হয় ৪০ টাকা, আমাদের এখানে তা অনেক বেশি। সে কারণে ফুড ল্যাব সহজলভ্য করতে হবে। আমরা মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গেও এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনিও আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, অর্গানিগ ফুডের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো গার্মেন্টস, কিন্তু রপ্তানিকে বহুমুখী করতে হবে। আর সেটা হতে পারে কৃষি। কৃষিতে যদি একটু বৈচিত্র্য আনতে পারি, অর্গানিক ফুডকে রিচ করতে পারি, এক্সপোর্টের বাধা দূর করতে পারি, তাহলে কৃষি দিয়ে আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারব।

ফুড ল্যাবের ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের ৮ থেকে ১০টি পণ্য অর্গানিক হিসেবে চি‎িহ্নত করা যেতে পারে। কয়েক রকম ফল, সবজি অর্গানিক হতে পারে। বিদেশে আমাদের সবজির সুনাম আছে। বিশেষ কয়েকটি সবজি অর্গানিক করতে পারলে এগুলো আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারব। দেশের মধ্যেও আমাদের অর্গানিক ফুডের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা থাকতে হবে। কারণ আমি একা বললে কৃষক আমার কথা শুনবে না। সরকার ঘোষণা দিলে কাজ হবে।

বাজেটে প্রত্যাশা
বাজেট নিয়ে আমি এনবিআরের সঙ্গে কথা বলেছি, এক্সপোর্টারদের একটা পেইন রয়েছে। আমরা সব এক্সপোর্টার ইনসেনটিভ পাই না। আমাদের এখানে ম্যানুফেকচারার কাম এক্সপোর্টাররা ইনসেনটিভ পায় ২০ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বের সব এক্সপোর্টার ইনসেনটিভ পায়। আমরা কেন পাই না আমি জানি না! আমরা চাই সব এক্সপোর্টার, ম্যানুফ্যাকচারারকে ইনসেনটিভ দেওয়া হোক। কারণ এক্সপোর্টরাদের ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সুবিধা না-ও থাকতে পারে, আবার সব ম্যানুফ্যাকচারের এক্সপোর্ট সুবিধা না-ও থাকতে পারে। আমরা বলছি, এটার একটা সমন্বয় করে সবাইকে ইনসেনটিভ দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। তাহলে আমরা উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশে সহজে পৌঁছাতে পারব।

ইসহাকুল হোসেন সুইট

ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাসট্রি

প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, তোহফা এন্টারপ্রাইজ