জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আজ কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কাজ করছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানী ঢাকা জুরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডেও মনিটরিং করছে তারা। এছাড়াও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
১৫ আগস্ট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। জঙ্গিরা বা অপশক্তি যাতে ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠানস্থলে বা এর আশপাশে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সেই জন্য সতর্ক রয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনী। অনুষ্ঠানস্থলে বা আশপাশের দু’কিলোমিটারের মধ্যেও যদি কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে তাহলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটবে না বলেও জানিয়েছে পুলিশ। তবে ১৫ আগস্ট ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের ডিজি। এদিকে আশঙ্কা একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছে না ডিএমপি। সব ধরনের চিন্তা চেতনা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বলয় তেরি করেছে ডিএমপি।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। সম্প্রতি অনলাইনে বোমা তৈরির লিডিং পর্যায়ের জঙ্গি সংগঠনের সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকানকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ফোরকান বোমা বিশেষজ্ঞ ও অনলাইনে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিত।
জঙ্গিদের বিষয়ে সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জঙ্গিদের অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটে’।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
শনিবার ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উদযাপন উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, জঙ্গিরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তৎপর রয়েছে। কিছু জঙ্গি সংস্থা সাইবার ওয়ার্ল্ড এর মাধ্যমে আফগানিস্তানে তালেবানদের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য লোকজনদের আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু লোক পায়ে হেটে বা সড়ক পথে আফগানিস্তান যাওয়ার চেষ্টাকালে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়েছে। জঙ্গিদের বিভিন্ন কর্মতৎপরতা পর্যবেক্ষনে ডিএমপিসহ বাংলাদেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে।
ডিএমপি কমিশনার জানান, সাইবার ওয়ার্ল্ড এ জঙ্গীদের কর্মকান্ডের ওপর সাইবার পেট্রোলিং এর মাধ্যমে নজরদারী অব্যাহত রেখেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
তিনি বলেন, গত পরশু জঙ্গি সংগঠনের লিডিং পর্যায়ের একজনকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি। যিনি বোমা বিশেষজ্ঞ ও অনলাইনে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতো। এই পুরো গ্যাংটাকে আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, শোকদিবসের কর্মসূচি ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় প্রতিবারের মতোই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন তাদেরকে পায়ে হেঁটে আসতে হবে। এখানে প্রবেশের আগেই প্রতিটি চেকপোস্টে প্রত্যেককে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ এই ভেন্যুতে থাকবেন ততক্ষণ পুরো ভেন্যুটি জনশূন্য থাকবে।
শুধুমাত্র তার নিরাপত্তার দায়িত্বে সংশ্লিষ্টরা অবস্থান করবেন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বেন্যু ত্যাগ করার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সর্বসাধারণের পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন,যারা আসবেন সু-শৃঙ্খলভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসবেন। অনুষ্ঠানস্থলে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সবাইকে অনুরোধ করবো সেলফি তুলে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভেন্যু ত্যাগ করবেন।
আজ ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ট্রাফিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গসহ বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা মহানগরী ও আশেপাশের এলাকা হতে বিভিন্ন পরিবহনযোগে ও পায়ে হেঁটে অসংখ্য নেতা কর্মীসহ সাধারণ জনগণ সেখানে আসছেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের যানবাহন সুষ্ঠুভাবে চলাচল ও যানজট পরিহারের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর এলাকায় ১৫ আগস্ট ভোর হতে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প পথে যান চলাচলের জন্য গাড়ি চালক ও ব্যবহারকারীদের প্রতি ডিএমপি’র পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।
মিরপুর গাবতলী থেকে আসা রাসেল স্কোয়ার আজিমপুর অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন মানিকমিয়া এভিনিউ ধানমন্ডি ২৭ ডানে মোড় নিয়ে শংকর জিগাতলা সাইন্সল্যাব হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এছাড়া নিউমার্কেট ও সাইন্সল্যাব হতে আসা রাসেল স্কোয়ার অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড বামে মোড় নিয়ে জিগাতলা শংকর হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।
এদিকে রেইনবো এফডিসি হতে আগত রাসেল স্কোয়ার অভিমুখী যাত্রীবাহী বাস সোনারগাঁও ক্রসিং বামে মোড় নিয়ে বাংলামটর দিয়ে শাহবাগ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের যাতায়তের পথ (যানবাহন চলাচল) মানিক মিয়া এভিনিউ ধানমন্ডি ২৭ মেট্রো শপিংমল ডানে মোড় আহসানিয়া মিশন ক্রসিং বামে মোড় ৩২নং পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছাবে।
৩২নং ব্রীজের উত্তরের ১১নম্বর রোডের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্ত (পতাকাবাহী, পিজিআর, এসএসএফ, ফায়ার সার্ভিস, বাহিনীর প্রধানসহ আইজিপি ও সিনিয়র সচিব বা সচিব পদমর্যাদার সকল গাড়ি পার্কিং করবে।
সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সকল গাড়ি ৩২ নম্বর ব্রীজের দক্ষিণে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে পার্কিং করবে।
আহসানিয়া মিশনের উত্তর রাস্তায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সকল গাড়ি থাকবে।
উপরোক্ত জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী চলাকালীন যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনসাধারণের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্মানিত নাগরিকদের যানবাহন চলাচলে সাময়িকভাবে বিঘœ ঘটায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।