জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে যেকোনো চুক্তি হতে পারে : কাদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে ভারত সফর করবেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে সামরিক, বেসামরিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক যেকোনো চুক্তিই হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমেরিকা এবং রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেশের সামরিক চুক্তি আছে। গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি আছে। এটা নিয়ে গেল রে, গেল ইন্ডিয়া হয়ে গেল-এমন অপপ্রচার এবং ভারত ভীতি থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবন প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।১৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ১৯তম কাউন্সিল অধিবেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে মাথা উঁচু করে বীরের বেশে ভারত যাবেন। সেখানে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে যে চুক্তি জনগণের জন্য প্রয়োজন সেটাই করবেন। এটা তো একতরফা বিষয় নয়, উভয় পক্ষের সম্মতি লাগে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো চুক্তিই গোপন থাকবে না। তথ্য প্রবাহের বিস্ফোরণে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। গোপন করার তো আমাদের দরকার নেই। জনগণের কাছে কোনো তথ্য গোপন রাখা আমরা সমীচীন মনে করি না। সামরিক হোক, অসামরিক হোক। যেকোনো চুক্তি জাতীয় স্বার্থ সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে করতে আপত্তি কোথায়?’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের জন্য সংবেদনশীল। ভারত ইস্যু এলেই আমাদের দেশের একটা মহল গেল রে গেল বলে চিৎকার শুরু করে দেয়। সব ভারত হয়ে গেল। আমাদের দেশে অহেতুক ভারত ভীতি কাজ করে। যার বাস্তবের সঙ্গে কোনো সঙ্গতি নেই।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের কারণে ৪১ বছর পর ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। দেশের মানচিত্রে ১০ হাজার একর যুক্ত হয়েছে। যাতে জাতীয় স্বার্থ বিষর্জন হয়নি।’

ভারতকে দুঃসময়ের বন্ধু উল্লেখ করে কাদের আরও বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমরা সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব হবে। এতে কেউ বড়, কেউ ছোট নয়। যারা একদিন উঁচু গলায় বলেছিল, বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে গোলামির চুক্তি করেছে। যদি গোলামির চুক্তি করতেন, তাহলে ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর আমরাই ক্ষমতায় থাকতাম।’

ভারত ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

উপস্থিত প্রকৌশলীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম এলেই রাস্তায় সমস্যা দেখা দেয়, ওভার লোডেডের কারণেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়।বর্ষা এলেই সারা দেশের রাস্তাগুলো খারাপ অবস্থা দেখা দেয়। অনেক রাস্তা ফান্ডের অভাবে মেরামত করতে পারি না। বাজেট যেটুকু আসে তাতে যতটুকু প্রয়োজন তা প্রাপ্তির তুলনায় কম। যে কারণের বর্ষার আগেই অনেক রাস্তার কাজ শেষ করতে পারি না। প্রকৌশলীদের অনুরোধ করব, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও প্রতিবছরই বাজেট বাড়ছে।’

বিভিন্ন প্রকল্প কাজের বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাজের বিল কিছুদিন বিলম্বিত হতে পারে। আমি আপনাদের বলব, বিল দেরি হলেও কাজটা যাতে কোনোভাবে বিলম্বিত করবেন না। তাহলে হলে বহু মানুষের দুর্ভোগ হয়। রাস্তাগুলোর কাজ মেরামত করে ফেলবেন। কাজের মানটাও বজায় রাখবেন। বর্ষার আগেই আপনারা রাস্তাগুলো সচল রাখবেন। এ দেশের গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়, রাস্তা তৈরি করি।’

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্দেশ নিয়ে যাচ্ছি আপনার সারা দেশের দখল হওয়া রাস্তাগুলো উদ্ধার করবেন। এ ছাড়াকোনো এলাকার উন্নয়নকাজ প্রাইওরিটির ভিত্তিতে করবেন। এখানোকোনো মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় নেতাদের প্রভাবিত হয়ে কাজ করবেন না। আমি এটা সহ্য করব না। জনগণের কাছে যে কাজ বেশি গুরুত্ব সেটাই আগে করবেন।’

রাস্তা ভাঙা, ব্রিজ ভাঙার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে এই অভিযোগ যাতে আমি না পাই-এমনটা উল্লেখ করেন কাদের।

সংগঠনের সভাপতিমো. আবদুন নুমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন-সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, ইনস্টিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি এ কে এম এ হামিদ, সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতিরসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুন্তাসির হাফিজ প্রমুখ।