জাপানি নারীর কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চান সাবেক স্বামী

বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন তার সাবেক স্বামী ইমরান শরীফ। মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করায় এরিকোর কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় তাকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতেও বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার ইমরান শরীফের পক্ষে তার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম এ নোটিশ পাঠান। নাকানো এরিকোর গুলশান-২ এর ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ৭ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ৫ কোটি টাকা না দিলে ও প্রকাশ্য ক্ষমা না চাইলে নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।

নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান শরীফের পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম বলেন, নাকানো এরিকো সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন শিশু দুটিকে নাকি বাবা জাপান থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া শিশুদের বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কানাডিয়ান স্কুলে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, বাবা নাকি শিশু দুটিকে অপহরণ করেছে, যেন শিশু দুটির স্কুলের ভর্তি বাতিল হয়। আবার চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিশু দুটির বাবার মানহানি করেছে। এ কারণে আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি।

হাইকোর্টের আদেশে বর্তমানে জাপানি দুই শিশু বাবা-মাসহ গুলশানের একটি ফ্লাটে অবস্থান করছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে বেড়ানো বা মার্কেটে যাওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারবেন জাপানি মা চিকিৎসক নাকানো এরিকো। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফও সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে পারবেন। এছাড়া ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর শিশুদের সঙ্গে রাতে থাকবেন মা। বাকি দিনগুলোতে বাবা-মা উভয়ই আগের নির্দেশ অনুযায়ী শিশুদের সঙ্গে থাকবেন। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।

গত ৭ সেপ্টেম্বর জাপানি মা চিকিৎসক নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার সংক্রান্ত সব কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরোনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এছাড়া দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েও আবেদন করা হয়। দুই শিশুর জাপানি মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ আবেদন দায়ের করেন।

গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্ল্যাটের ভাড়া উভয়পক্ষ বহন করবে।

সমাজসেবা অধিদফতরের ঢাকার ডেপুটি ডিরেক্টর তাদের তত্ত্বাবধান করবেন। প্রয়োজনে এ কর্মকর্তা ওই ফ্ল্যাটে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। গুলশানের বাসায় থাকাকালীন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বলা হয়েছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত। তবে এ সময়ে হাইকোর্ট পুরো বিষয়টি নজরে রাখবেন।

দুই শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের মতামত নেয়ার পর আদালত এ আদেশ দিয়েছিলেন। যদিও একই বাসায় শিশুদের বাবার রাত যাপনে আপত্তি জানিয়েছিলেন শিশুদের মায়ের পক্ষের আইনজীবী। আদালত বলেছেন, আমরা চাই শিশুরা পারিবারিক পরিবেশে থাকুক।

ওই দিন আদালতে শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। শিশুদের বাংলাদেশি বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। এর আগে গত ১৯ আগস্ট সকালে দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। রিটে মেয়েদের নিজের জিম্মায় নেয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান