জেলখানায় ‘ঘুষ’ নেয়াকে কেন্দ্র করে বন্দিদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ

জেলখানায় ঘুষ নেয়াকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বন্দিদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চার ঘণ্টা ধরে কারাগার কার্যত বন্দিদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সংঘর্ষ চলাকালে ইট-পাটকেল ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের বারুইপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এমন ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালেও কারাগারটিতে বন্দিরা বিক্ষোভ করতে থাকে।

দেশটির গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, সন্ধ্যা থেকে কারাবন্দিদের হাতে বাঁশের লাঠি, উইকেট, লোহা বা স্টিলের রড। কারও হাতে আবার ধারালো বঁটি। এ অবস্থায় কারা কর্তৃপক্ষ অসহায় হয়ে পড়েন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ খরব দিলে কারারক্ষীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বন্দিরা ইট-পাটকেল ছুঁড়লেও পুলিশের বিরুদ্ধে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার অভিযোগ উঠে। সোমবার রাতে বন্দিদের বিক্ষোভের ছবি রীতিমতো ভিডিও আকারে কারাগারটির বাইরে চলে আসে। যেখানে কারা দফতরের ছোট-বড়-মেঝ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন বন্দিরা। সেখানে বন্দিরা দাবি করেছেন, নিজেদের অভাব-অভিযোগ তারা জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রীকে। একান্তই যদি তা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে নিজেদের অভিযোগের কথা তারা কারামন্ত্রীকে জানানোর দাবি করেন। কারা দফতরের শীর্ষ সব কর্মকর্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে খোদ কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস নিজে সোমবার রাতে যান বারুইপুর কারাগারে।

এ নিয়ে মঙ্গলবার কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘রাত প্রায় দেড়টা অবধি আমি বারুইপুরে ছিলাম। শুনেছি এ রকম কিছু ভিডিওর কথা। আমি গোটা বিষয় নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর দেখব, দফতরের কর্মীদের কী ভূমিকা।’

প্রাথমিকভাবে কারাকর্মীদের একাংশ দাবি করেন, সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে যখন গোটা কারাগার চত্বর বন্দিদের দখলে চলে যায়। অন্যদিকে কারা দফতরের কর্মীদের একটি অংশ দাবি করেন, বন্দিদের ওয়ার্ডে থাকা বেআইনি মোবাইল তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করাকে কেন্দ্র করেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। কারাবন্দিরা ভিডিওতে দাবি করছেন, ‘এখানে ইউটি (বিচারাধীন) এবং কনভিক্ট (সাজাপ্রাপ্ত)-দের মধ্যে কোনো লড়াই নেই। জেলের অফিসাররা মিথ্যা কথা বলছেন।’ ভিডিওতে, বন্দিদের বয়ানে উঠে এসেছে জেল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ।

এক বন্দিকে বলতে শোনা গেছে, ‘জেলের মধ্যে যে ফোন পাওয়া যাচ্ছে তা কোথা থেকে আসছে? আমাদের জেলের বাইরে বেরনোর সময় বা জেলে ঢোকানোর সময় সার্চিং হচ্ছে। জেলের বড়বাবু সুখেন্দুবাবু আমাদের ফোন দিচ্ছেন। জেলার স্বপন দাস আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। কেন? আমাকে বলেছেন, জেলের মধ্যে তুই ফোন চালা। কেস চালা। কোনো সমস্যা নেই। স্বপনবাবুও জেলে ফোন দিয়ে যাচ্ছেন আমাদেরকে। বলছেন, বড় ফোন জেলে ঢোকালে (স্মার্ট ফোন) ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। ছোট ফোন হলে ২ হাজার টাকা। তা হলে জেল কি ব্যবসা করার জায়গা?’

আজকের বাজার/এ.এ