জয়পুরহাটে খামারিদের মাঝে ৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা প্রণোদনা বিতরণ

করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার ৮ হাজার ৮৭০ খামারিকে সরকারি সহায়তা হিসেবে ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ১২৫ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। করোনার দীর্ঘ প্রভাবে ব্যাপক লোকসানে পড়ে পূঁজি নিয়ে সমস্যায় থাকা জয়পুরহাটের পোলট্রি খামারিরা সরকারের সহায়তায় বর্তমানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ জানায়, জয়পুরহাট জেলা পোলট্রি শিল্পে বিশেষ করে সোনালী মুরগি ও ডিম উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় জেলা হিসেবে পরিচিত। জেলায় উদ্যোক্তা রয়েছে ১১ হাজার ৫৭০ জন। এখানে ছোট বড় সোনালী ও ব্রয়লার মুরগীর খামার রয়েছে ১১ হাজার ১৩০ টি।

আর লেয়ার মুরগীর (ডিম পাড়া) খামার রয়েছে ৩৭০ টি। গবাদি পশুর খামার রয়েছে ৬ হাজার ২৮টি। জেলায় প্রতি বছর মাংস উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

জয়পুরহাটের প্রায় ১১ লাখ জনসংখ্যার জন্য মাংসের চাহিদা ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। জয়পুরহাট জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জেলায় দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৩২টি। জেলায় মুরগীর ডিম উৎপাদন হয় প্রতি বছর ৩৮ কোটি ৯ লাখ। আর জেলায় ডিমের চাহিদা ৯ কোটি ৮৮ লাখ। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় উদ্বৃত্ত মাংশ ও ডিম বিক্রি করে থাকেন খামারীরা। জয়পুরহাট জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে সোনালী মুরগীর বিপুল সংখ্যক খামার গড়ে উঠায় ওই সব পোলট্রি খামারকে কেন্দ্র করে জেলায় ডিম থেকে সোনালী জাতের বাচ্চা ফুটোনোর হ্যাচারি রয়েছে ৫৫ টি। মুরগীর খাদ্যে উৎপাদনের জন্য ফিড মিল আছে ১১টি। ফিড প্রিমিক্স কোম্পানী রয়েছে ২টি।

হ্যাচারিগুলো থেকে প্রতি বছর সোনালী জাতের মুরগীর ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন হয়ে থাকে ৮ কোটি ৫০ লাখ। জেলায় মুরগীর খামারিদের বাচ্চার চাহিদা রয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ। বাচ্চার চাহিদা মিটিয়ে জয়পুরহাট জেলার বাইরে ২ কোটি ২৫ লাখ সোনালী মুরগীর বাচ্চা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে জেলায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে করোনার প্রার্দুভাব থাকায় পোলট্রি খামারিরা পড়েন লোকসানের মুখে । ছোট ও মাঝারি খামারিরা রয়েছেন পুঁজি সংকটে। এ অবস্থা বিবেচনায় খামারিদের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান জনবান্ধব সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ৮ হাজার ৮৭০ খামারির মাঝে প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ১২৫ টাকা। এতে করে খামারিরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। সোনালী মুরগী উৎপাদনের খামার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনালী জাতের এক দিনের বাচ্চা ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকায় কিনে তা ৬০-৬৫ দিন লালন পালন করতে হয়। ৬৫ দিন লালন পালন করে প্রতি কেজি মাংস উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয় ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। বর্তমান পাইকারি বাজারে ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে। বাজারে খুচরা ব্যবসায়িরা ওই মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাক পর্যন্ত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে। আর ব্রয়লার মুরগী ১১০ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। সরকার বিধিনিষেধ শিথীল করায় বর্তমানে বিয়ে সাদী, পিকনিকসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য মুরগীর মাংসের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং দাম ভালো পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশা করছেন খামারিরা।

জেলার পোলট্রি খামারিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যুব উদ্যেক্তার পুরস্কার প্রাপ্ত ক্ষেতলাল উপজেলার তাহেরামজিদ এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজের ব্যবস্থপনা পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘ করোনার প্রভাবে লোকসানের পরিমান হচ্ছে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। নিজস্ব খামারে উৎপাদিত ১ লক্ষ সোনালী মাংসের মুরগী, ১০ হাজার সোনালী ডিমের মুরগী ও ৫০ হাজার ব্রয়লার মুরগী প্রতিষ্ঠানের পিকআপের মাধ্যমে সোনারী মুরগী ঢাকা সহ চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করা হতো। বর্তমানে ৫ টি খামার একবারেই বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, ব্যংক ঋণের পরিমান ৫০ লাখ টাকাসহ নিজস্ব বিনিয়োগ ছিল প্রায় তিন কোটি টাকা।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় পাওয়া টাকা দিয়ে টুকটাক মুরগি উৎপাদন শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। জেলা সদরের আমতলি এলাকার বাসিন্দা উত্তরণ ফার্মিং কমপ্লেক্সে এবং কিষাণ হ্যাচারির মালিক ফরিদ হোসেন ও আক্কেলপুর উপজেলার জামালগজ্ঞ বাজারের বড় পোলট্রি শিল্প শেফালি পোলট্রি ফার্ম লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারি সাইফুল আলম বলেন, বিপুল অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে। সরকারের সহায়তায় খামারিরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

জয়পুরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) ডাঃ মাহফুজার রহমান বলেন, জেলায় প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগের পরিমান হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। করোনার জন্য জেলার পোলট্রি খামার, হ্যাচারি এবং ফিড মিল মালিকরা ব্যাপক লোকসানে পড়েন। বিধিনিষেধ শিথীল করাসহ বর্তমান সরকারের সহায়তায় এ শিল্পটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগ জেলায় ৮ হাজার ৮৭০ খামারিকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ১২৫ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

জয়পুরহাট জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি পদ্মা ফিডস এন্ড চিকস প্রাঃ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারি আনোয়ারুল হক আনু জানান, করোনার প্রভাবে জেলায় পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খাতে প্রায় একশ কোটি টাকার উপরে লোকসান হয়েছে। এছাড়াও বাজারে ব্যবসায়ীদের নিকট রয়েছে প্রায় ২শ কোটি টাকা। ব্যবসা না থাকায় এগুলো পরিশোধ করতে পারছেনা ব্যবসায়ীরা। ফলে এ শিল্প এখনও বড় বিপর্যয়ের মুখে। উল্লেখ্য, জেলা ব্র্যাডিং হচ্ছে ’সোনালী মুরগী, লতিরাজ’ এর একটি হচ্ছে সোনালী মুরগী। জেলার পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করার জন্য প্রণোদনার আওতায় স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রয়োজন। এ ব্যপারে সরকারের সহায়তা কামনা করেন আনোয়ারুল হক আনু। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান