ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে

তানিয়া ফেরদৌস তারিন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, করোনাভাইরাস (কোভিড -১৯) মহামারীর মধ্যে তার বৃদ্ধ পিতার সুরক্ষা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। তিনি তার বাবাকে টিকা দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেন।

কিন্তু ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ তার সকল উদ্বেগ দূর করে দিয়েছে। তিনি এই অ্যাপের মাধ্যমে তার বাবার নাম নিবন্ধন করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে একটি ম্যাসেজ পান। তারপর তার বাবা কোন ঝামেলা ছাড়াই সঠিক সময়ে টিকা নেন।

এত সুন্দর ও সহজ পদ্ধতির জন্য তারিন আইসিটি বিভাগকে ধন্যবাদ জানান। কারণ, এই বিভাগ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন নিশ্চিত করেছে এবং এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সকলের জন্য সুশৃংঙ্খল ও সহজ পদ্ধতিতে করোনার টিকা নিশ্চিত করার জন্য ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ তৈরি করেন।

‘আমার বাবা কোনো ঝামেলা ছাড়াই দুই ডোজ টিকা গ্রহণ করেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। তাই, আমি বাবাকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম,’ তানিয়া আনন্দের সঙ্গে জানান।

শুধু করোনার টিকা নয়, এসডিজির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইসিটি বিভাগ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন নিশ্চিত করছে। মহামারীর এই সময়, আইসিটি বিভাগ রোগীদের জন্য এটুআই-এর মাধ্যমে টেলি-স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেছে। এমনকি গভীর রাতেও মানুষ এই সেবা গ্রহণ করছে। লকডাউনের মধ্যে, ই-গভর্নেন্স, অনলাইন মিটিং, ই-কমার্স এবং অনলাইন গরুর বাজার খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যা এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি নির্দেশ করে।

আইএসটি বিভাগের এসডিজি ফোকাল পয়েন্ট নাহিদ সুলতানা মল্লিক আলাপকালে বলেন, আইসিটি বিভাগ ৯সি ও ১৭.৮ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রধান মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করছে এবং ৯বি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহযোগী মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করছে। নাহিদ বলেন, এসডিজি ট্র্যাকার আইসিটি বিভাগকে তার অর্জন মূল্যায়ন করতে, তার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলি নির্ধারণ করতে সয়াহতা করছে।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অন্যতম। তদুপরি, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের জন্য, সরকার ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখন তাদের দোরগোড়ায় সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছে,’ তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, লকডাউনের সময় অনেক সরকারি কর্মকর্তা বাড়ি থেকে কাজ করেছেন এবং ই-ফাইলিং প্রবর্তনের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

এটুআই-এর প্রকল্প সহকারি (এসডিজি) টিটো চাকমা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারসহ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রযুক্তিগত সয়াহতায় এটুআই প্রোগ্রাম এসডিজি ট্র্যাকার ডিজাইন এবং ডেভেলপ করেছে যাতে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ডাটা সংগ্রহস্থল তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, এসডিজি ট্র্যাকারের উদ্দেশ্য হল প্রতিটি লক্ষ্য এবং লক্ষ্যের বিপরীতে অগ্রগতি সম্পর্কে জানা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ উন্নত করা এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যৎ বাণী পূর্ণ বিশ্লেষণ সক্ষম করা।

তিনি বলেন, এসডিজি ট্র্যাকারের দু’টি প্রধান উপাদান হলো এসডিজি পোর্টাল এবং ড্যাশবোর্ড। এসডিজি পোর্টাল নীতিনির্ধারক, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নাগরিকদের প্রতিটি লক্ষ্যের বিপরীতে বছরের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে এবং প্রয়োজনীয় ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করতে সক্ষম। অন্যদিকে, এসডিজি ড্যাশবোর্ড প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং সংস্থাকে প্রতিটি এসডিজির জন্য ডাটা একত্রিত করতে এবং কর্মক্ষমতার সীমার সাথে দৃশ্যত অগ্রগতি তুলনা করতে সয়াহতা করে, তিনি জানান।

তিনি বলেন, ফলস্বরূপ ড্যাশবোর্ডগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে মন্ত্রণালয়গুলোর কোনদিকে সর্বাধিক নজর দিতে হবে তা তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশ সরকার এমডিজি অর্জন টেকসই রাখতে এবং এসডিজি অর্জনে উদাহারণ সৃষ্টি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জাতীয় পরিকল্পনা এবং কর্মগুলোও এই প্রতিশ্রুতির দিকে পরিচালিত করছে। এসডিজি ট্র্যাকার এই কাজগুলোকে সঠিক পথে চালাতে সহায্য করছে,’ তিনি উল্লেখ করেন।

এসডিজি অর্জনের জন্য সবাইকে একই প্লাটফর্মে রেখে, টিটো বলেন, সব প্রতিষ্ঠান নিজেদের এবং তাদের সহযোগীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এইভাবে, মন্ত্রণালয়গুলো সহজেই তাদের অবস্থান জানতে পারে এবং তারা বাস্তবসম্মত নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে না, তিনি যোগ করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত, বিবিএস ক্যালেন্ডার অনুসারে, এসডিজি ট্র্যাকারে ১১ টি আপডেট ডাটা-ধারণকারী এসডিজি সূচক রয়েছে।

তিনি বলেন, এই ১১টি সূচকের সবগুলোই ট্র্যাকারে প্রদান, অনুমোদন ও প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে নয়টি সংস্থা ট্র্যাকারে তাদের ডাটা আপডেট করেছে এবং মোট ৫৮১ জন সরকারি কর্মকর্তাকে ট্র্যাকার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

টিটো উল্লেখ করেছেন, শুধু ডিজিটাইজেশন নয়, বাংলাদেশ এসডিজির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে এবং তাই, বিশ্ব সম্প্রদায় এর প্রশংসা করছে। টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে তিন শীর্ষ ভাল কর্মসম্পাদনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং আইভোরি কোস্ট ২০১৫ সালে ২০৩০ এর জন্য গ্লোবাল এজেন্ডা গ্রহণের পর থেকে এসডিজি ইনডেক্স স্কোরে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান