ঢাকা-সিলেট করিডোর কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে: এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর

বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ আজ বলেছেন, ঢাকা-সিলেট করিডোর কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এটি বাংলাদেশের জন্য উপ-আঞ্চলিক, আঞ্চলিক এমনকি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও অপরিসীম সম্ভাবনা উন্মুক্ত করবে। তিনি বলেন, অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিলেট অঞ্চলে) হবে যেখানে যোগাযোগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। উন্নত যোগাযোগের ফলে পরিবহন ও বাণিজ্য ব্যয় হ্রাস করবে এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি করিডর। বাংলাদেশে ঢাকা-সিলেট বাণিজ্য করিডোরের পাশাপাশি গতিশীলতা, সড়ক নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি জন্য উন্নয়ন অংশীদার সংস্থাটি গতকাল ১.৭৮ বিলিয়ন ডলারের মাল্টিট্রেঞ্চ ফাইন্যান্সিং সুবিধা (এমএফএফ) অনুমোদন করার পর বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কথা বলেন।

ঢাকা-সিলেট করিডোরটি একবার শেষ হয়ে গেলে, একটি নতুন বাণিজ্য পথকে তুলে ধরবে যা আখাউরা, শেওলা এবং তামাবিলের তিনটি স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে চাট্টোগ্রাম বন্দরকে সংযুক্ত করবে এবং সেখান থেকে ভুটান ও মিয়ানমারে যাবে। করিডোরটি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পিত উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশ অর্থনৈতিক করিডোরের কেন্দ্রবিন্দু, যার লক্ষ্য এই এলাকার মূল শিল্পগুলোকে উৎসাহিত করা, যেমন জ্বালানি উৎপাদন এবং নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন এবং দেশের অন্যান্য অর্থনীতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে তাদের আরও ভালোভাবে একীভূত করা।

মনমোহন বলেন, আশা করি এই প্রকল্পের ফলে সড়ক, রেল, নদী বন্দর এবং চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ির সমুদ্র বন্দরগুলোকে সংযুক্ত করে মাল্টিমডেল বা ইন্টারমডেল পরিবহন যোগাযোগ হবে। তিনি বলেন, যদি সীমান্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়, তাহলে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে প্রচুর শিল্পোন্নয়ন সহজতর করা সম্ভব হবে কারণ এটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশ।

এডিবি’র সাম্প্রতিক এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যদি এই অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকৃত উৎপাদন হবে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চল থেকে শিল্প উৎপাদন ১১২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই করিডোর দিয়ে ভ্রমণের সময় প্রায় তিন ঘন্টায় হ্রাস পাবে এবং যানবাহন পরিচালনার ব্যয়, পরিবহন ব্যয়, লজিস্টিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

তিনি যোগ করেন, এর পাশাপাশি এটি সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে, আঞ্চলিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে এবং কোম্পানি ও ব্যবসায়ের বাণিজ্য প্রতিযোগিতারও উন্নতি হবে। সুতরাং, গুণক প্রভাব পড়বে, এটি আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে…আমরা আশাবাদী যে এটি একটি টেকসই উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করবে, করিডোর বরাবর আরও অনেক বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ঘটাবে। সমগ্র সিলেট অঞ্চলে সমৃদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে মনমোহন বলেন, এখন সময় এসেছে এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং এইভাবে বাণিজ্যের অপরিসীম সম্ভাবনা সম্পন্ন এই অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলার। এই সিলেট অঞ্চলে গ্যাস, পাথর ও সাদা মাটির বিশাল ভান্ডার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে কাঁচ ও সিরামিক শিল্পের পাশাপাশি কৃষিপণ্য ও মাছ উৎপাদন ও বিপণনের ওপর ভিত্তি করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পও উপকৃত হবে। আতিথেয়তা শিল্পের প্রসারে পর্যটন ও ইকো-ট্যুরিজমের পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পও থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

মনহোমান বলেন, যেহেতু এই করিডোরটি মেঘালয় এবং আসামের পাশে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলো সেখানে এমনকি ত্রিপুরা, নেপাল এবং ভুটানেও যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এটি সত্যিই একটি করিডোর যা বিভিন্ন শিল্পকে উৎসাহিত করতে পারে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি আগামী ৫ থেকে ৬ বছরে যখন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে, তখন আমরা একটি অত্যন্ত সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে রাস্তার সর্বোত্তম রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক চুক্তি এবং যানবাহন নির্গমন মান অনুসরণ করা হবে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান