তুলা উৎপাদন ১০ লাখ বেল ছাড়ানোর আশা

আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব তুলা উৎপাদন ১০ লাখ বেল ছাড়াবে বলে আশা করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। তবে এ জন্য দেশে জেনটিক্যালি মোডিফাইয়েড বিটি জাতের তুলা চাষ করতে হবে বলে মনে করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন। তিনি মনে করেন বিটি জাতের তুলা চাষ করা হলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব পড়বে। কারণ বাংলাদেশ তার প্রয়োজনের বেশিরভাগ তুলাই ভারত, আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকে।

বিটি তুলার বীজ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে চলতি বছরের প্রথম দিকে ড. মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে বিটি তুলার বীজ কৃষক পর্যায়ে ছাড়ার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়াধীন ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেফটির অধীনে কনটেন্ট ট্রায়াল চলছে । তিনি তখন বলেন, বছরে বাংলাদেশকে সাড়ে ৫ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার বেল। তাই উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প হিসেবে বিটি তুলা বীজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে জেনেটিক লিটারেসি প্রজেক্ট ডট ওআরজি এক বিবৃতে বলেছে, বাংলাদেশ চীনের পরেই এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশটির তৈরি পোশাক খাতের জন্য বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ বেল তুলা আমদানি করে থাকে। আর দেশটিতে উৎপাদিত হয় মাত্র দেড় লাখ বেল তুলা। জেনেটিক লিটারেসি প্রজেক্টের মতে বাংলাদেশের বিপুল তুলার চাহিদা মেটাতে পারে কেবল জেনটিক্যালি মোডিফাইয়েড বিটি জাতের তুলা।

উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কিছুদিন আগে বলেছিলেন, বিটি জাতের তুলা চাষ করা হলে দেশের তৈরি পোশাকে ব্যহৃত ফেব্রিক্সের মানও ২০ শতাংশ বাড়বে। তবে বিটি বেগুনের মতো বিটি জাতের তুলা চাষেরও বিরোধীতা করছে দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তারা বলছে, বিটি তুলা কৃষি, কৃষক, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। শুধুমাত্র কোম্পানির স্বার্থে এই তুলা চাষের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পৃথিবীর যেখানে যা নিষিদ্ধ করা হয় তাই বাজারজাত করে এদেশ থেকে মুনাফা লুটে নেয় বহুজাতিক কোম্পানি। সরকারের জিএম বিটি তুলা চাষের যে কোনো তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানাই। বাংলাদেশের কৃষিতে বহুজাতিক কোম্পানির চলমান আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই। তারা ভারতে বিটি কটন নিষিদ্ধ হয়েছে দাবি করে জানান, মনসান্টো-মাহিকোর বীজ কিনে বিটি তুলার চাষ করতে গিয়ে ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারতের কৃষকেরা। হাজার হাজার একর তুলার ফলন নষ্ট হয়েছ।

ভারতীয় কৃষকরা চড়া দামে বিটি তুলার বীজ কিনেছেন। কিন্তু ফলন বৃদ্ধি দূরের কথা মহারাষ্ট্র রাজ্য এবং কর্ণাটক রাজ্যের হাজার হাজার একর তুলা নষ্ট হয়েছে। সরকার, মাহিকো কোম্পানি এবং কৃষি বিজ্ঞানিদের দ্বারা পরিচালিত ফিল্ড লেভেল এসেসমেন্ট এ জানা যায় শুধু কর্ণাটক রাজ্যেই ৫৪ হাজার হেক্টর তুলা নষ্ট হয় যার আর্থিক মূল্য ২৩০ কোটি রুপি।

গবেষণায় দেখা যায় গুজরাট, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন জায়গায় পোকা বিটি কটনের প্রতিই প্রতিরোধী হয়ে উঠে। এই পেস্ট রেজিস্ট্যন্সের ফলে বিটি টক্সিন কার্যকারিতা হারায় এবং পোকার আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের আরও অধিক পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

বিটি হচ্ছে একধরনের বায়ো পেস্টিসাইড ব্যাক্টেরিয়া যার ক্রিস্টাল জিন এক ধরনের ক্রিস্টাল প্রোটিন প্রস্তুত করে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে তুলায় বিটির এই জিন ঢুকিয়ে বিটি তুলা তৈরি করা হয়। মার্কিন এগ্রো কর্পোরেশন মনসান্তো এই বিটি প্রযুক্তির মালিক। বিটির ওই ক্রিস্টাল প্রোটিন যখন পোকার অন্ত্রে প্রবেশ করে তখন অন্ত্রের ক্ষারীয় পরিবেশে এক ধরনের জৈব রসের উপস্থিতিতে ক্রিস্টাল প্রোটিনটি ভেঙ্গে গিয়ে ডেল্টা-এন্ডোটক্সিন প্রস্তুত হয় যা পোকার অন্ত্রের রিসেপ্টর এর সাথে যুক্ত হলে পোকার অন্ত্রে ছিদ্র তৈরি হয়। এক পর্যায়ে পোকার মৃত্যু হয়।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/৮ মে,২০১৭