তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব সিপিডি’র

ডিজেল ও কেরোসিনের তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির গবেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দীর্ঘদিন ধরে তেলের দাম কম থাকলেও দেশে তেলের দাম কমছে না। ডিজেল ও কেরোসিনের মধ্যে দরিদ্র মানুষ কেরোসিন বেশি ব্যবহার করে থাকে। এ দুটি জ্বালানি থেকে সরকার বেশি মুনাফা করলে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি সাশ্রয় হবে না। দাম কমালে গরিব মানুষ লাভবান হবে।

রোববার (১৬ এপ্রিল) মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ সিপিডির সুপারিশমালা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ প্রস্তাব তুলে ধরেন। এসময় সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির লিখিত বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতা কাটাতে ৫টি সুপারিশ করেছে “সিপিডি”। তেলের দাম কমানো, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় খাতকে সুবিধা দিতে স্বল্প মেয়াদে টাকার মূল্যমান কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করতে স্বাধীন আর্থিক খাত সংস্থার কমিশন গঠন।

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সম্প্রসারণশীল হওয়া সম্ভব তবে সেই বড় বাজেট বাস্তবায়নে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন সিপিডি। একই সাথে ভ্যাটের হার বিদ্যমান ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন তারা।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা সম্প্রসারণশীল বাজেটের পক্ষে এবং আমরাও গবেষণায় দেখেছি বড় বাজেট সম্ভব। বড় বাজেট দিলে উন্নয়ন আকাঙ্খা পূরণ হবে, বিনিয়োগ চাঙা হবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় সরকার বড় বাজেটই দেবে বলে আমরা মনে করছি। কিন্তু আমরা একই সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বড় বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ছে না। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে আরও সিরিয়াস ভূমিকা পালন করতে হবে।’

এসময় বাজেট বাস্তবায়নে জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে বলেও অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রতি বছরই সরকার বড় বাজেটের নাম করে একটি কল্পকাহিনী উপস্থাপন করে। বাজেট দেওয়ার আগে নানান জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। বাজেটও দেওয়া হয় সাধ্যমত, কিন্তু বছর শেষে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক দেখা যাচ্ছে।
বড় বাজাটের নামে আর্থিক ভ্রম তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান কারণ জনপ্রতিনিধিদের জনগণের বাজেটের উপর মালিকানা বোধ নেই। তারা এটাকে তত্ত্ববধায়ন করে না। জনপ্রতিনিধিদের এলাকার জনগণ যে কর দিল সেই করের যথার্থ কাজ হয়েছে কি না তা তারা দেখে না। এটিই বাজেটের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি।
বড় বাজেট বাস্তবায়নে সিপিডির বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে ব্যক্তি খাতে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ বাড়ছে। সরকারের উচিত এটাকে সমর্থন দেওয়া।
ব্যাংকিং খাত সংস্কারে কমিশন গঠন জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত খুবই দুর্বল রয়েছে এর জন্য এ খাত সংস্কারে কমিশন গঠন জরুরি কিন্তু তা আদৌ হবে বলে মনে হয় না। ব্যাংকিং খাতে দুর্বত্তায়নের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, সামাজিক মর্যাদা আছে। এই কারণে নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার বাজারের প্রস্তাবনা নিয়ে সিপিডি’র গবেষনা পরিচালক ড. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শেয়ার বাজার নিয়ে সিপিডি’র সরাসারি কোনো প্রস্তাবনা নেই তবে আগের যে সিদ্ধান্তগুলো রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নই আমরা চাচ্ছি। বিদেশী উদ্যোগতাদের বিনোয়োগে সরকারের থেকে ডিএসই এবং সিএসই’র কার্যকরী উদ্যোগ দরকার। আর একটি প্রস্তাব “ফিনানশিয়াল অ্যাক্ট” শেয়ার বাজারের জন্য খুবই জরুরী। এর মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবগুলোকে স্পষ্ট করা। নতুনা কম্পানিগুলোর প্রতি মানুষের যে আস্থা, সেই আস্থার জায়গাটি তৈরি হবে না। একই সাথে বিনিয়োগ কারীরাও দেখেন যে কোন কোম্পানি অডিট করছে, তার উপরও অনেক সময় তারা সিদ্ধান্ত নেন। সে ক্ষেত্রে এফআরএ বাস্তবায়ন হওয়াটি খুব জরুরী বিষয়। সরকারের হাতে থাকা শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারেও এর আগে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু এটির বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত দেখছি না। নীতিগত ভাবে সরকারের মধ্যেই এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া বক্তব্য দেন, সিডিপি’র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।