দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউট

ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউট দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়কে রাণিরহাট বাজারের অদূরে দুই একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে। ২০০৩ সালে স্থাপিত হলেও শিক্ষার্থীদের প্রথম ব্যাচ ২০০৯ সালে কোর্স সম্পন্ন করে বের হয়।

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. রকিব উল্লাহ বলেন, ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত গত দশ বছরে ১৭শ’ শিক্ষার্থী এখান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেছে।

কোর্স সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ সেশনের পূর্ব পর্যন্ত কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ও ডাটা টেলিকমিউনিকেশন এন্ড নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি বিষয়ে দুই শিফট এ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়া হত। বর্তমানে টেলি কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিষয় সংযুক্ত হয়েছে। প্রতি বিষয়ে ৫০টি করে দুই শিফট এ ১০০টি আসন রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২শ।

প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ রানা বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারী বৃহৎ আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউট বিষয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা অর্জনে আইটিতে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। আমি আজ এখানে এসেছি কারণ, আমার ভিত তৈরী করেছে ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউট।

প্রতিষ্ঠানটির অফিস সূত্রে জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘স্কিল ফর ইমপ্লয়মেন্ট এ- ইনভেস্টমেন্ট প্রোগাম (এসইআইপি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে হত দরিদ্র, অসহায় ও বেকার যুবক-যুবতিদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে ৪ মাস মেয়াদী শর্ট কোর্স প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পে আইটি সাপোর্ট, ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান হয়ে থাকে।

ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউটে ২০১৬ সাল হতে এ প্রকল্প চলমান। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে সরকার নানাবিধ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প হলেও একাধিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মানুষদের তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১৬ হতে এ পর্যন্ত ১১৭০ জন বেকার, দরিদ্র যুবক যুবতীকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এদের প্রত্যেককে কোর্স চলাকালীন দৈনিক একশত টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে এ প্রকল্প বড় ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সুবিধা বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, এখানে ১৩টি ল্যাব ও ওয়ার্কশপ আছে। প্রতিটি ল্যাব আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ। সরকারের স্কিল এন্ড ট্রেনিং ইনহ্যান্সমেন্ট (এসটিই) প্রকল্পের অনুকূলে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। এখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে কম্পিউটার সুবিধাও রয়েছে।

শিক্ষকদের দক্ষতা বিষয়ে তিনি বলেন, এসটিই প্রকল্পে ১০ জন শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিঙ্গাপুর হতে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউটসহ ৫০টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট রয়েছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক ও ব্যবহারিক শ্রেণীতে ইন্সট্রাক্টরের সংকট সবসময়ই ভোগাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৩১জন শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টরের পদ থাকলেও বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ ২১ জন শিক্ষক রয়েছে।

আজকের বাজার/আখনূর রহমান