দু’হাত হারিয়ে ফরিদগঞ্জের জাহাঙ্গীর জীবন যুদ্ধে লড়ছে

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর রামপুর গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর গাজী। বয়স ৪৩ বছর। দু’ হাত হারিয়ে এখনও জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জাহাঙ্গীরের স্বপ্ন ছিল সুন্দর জীবন গড়ার কিন্তু এক দুর্ঘটনা তার সব কিছু এলোমেলো করে দিলো।

তার সম্পর্কে জানাতে কথা হয় জাহাঙ্গীরের সাথে। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি একজন রড মিস্ত্রী ছিলাম। আমার দু’হাত ছিল, শরীরও ভালো ছিল। স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবো, সুন্দর জীবন গড়বো। সংসার করবো। সেজন্য প্রচুর পরিশ্রম করতাম। শক্ত হাতে ঝটপট কাজও করতাম, নতুন কাজও শিখতাম, যাতে বিদেশ গিয়ে কোন অদক্ষতা চোখে না পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালের নভেম্বরের দিকে ঢাকার খিলগাঁওয়ে এক নির্মাণাধীন ভবনে একদিন কাজ করতে গিয়ে রড হঠাৎ বিদ্যুতের হেভী লাইনে লেগে গিয়ে শক খেয়ে ছিঁটকে পড়ি, মারাত্মক আহত হই। বাঁচার সম্ভাবনা ছিলই না। দু‘হাত, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বেঁচে থাকার তাগিদে আমার দু‘হাতের কনুইয়ের উপর পর্যন্ত সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে বাধ্য হই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দুখে দুখে বেঁচে আছি।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার দু‘হাত হারানোর পর বাড়ি ফিরে এলাম শুন্য হাতে। বাবা মারা গেছেন সেই ১৯৯২ সালে আর এক বছর আগে মাও মারা গেলেন। আমি বাবা-মা’র সবচেয়ে ছোট ছেলে। ঘৃনা করি ভিক্ষাকে। তাই লোন করে বাড়ির পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ছোট্ট দোকান দিলাম। এভাবেই কাজ শুরু করলাম, বাঁচতে তো হবে। ২০০০ সালে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করলাম। আমার তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে টানাটানির সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর অসহায় হয়ে গেলাম। দু’হাতের অভাবে না পারি কিছু ধরতে, না পারি কিছু করতে। আমি যে সম্পূর্ণ অচল, অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না।’

‘মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের এক বিধবা মেয়ে আমার অবস্থা দেখে আমাকে বিয়ে করতে সম্মত হওয়ায় আবার সন্তানদের নিয়ে নতুন সংসার জীবন শুরু হলো। আর্থিক অনটনে হলেও আমার সংসার জীবন মোটামুটি কেটে যাচ্ছে। করোনকালে কোন সাহায্য পাই নাই। চকলেট, কলম, খাতার দোকান দিয়ে ছেলেকে সাথে নিয়ে যা বেচা-বিক্রি হয়, তা দিয়েই অতি কষ্টে সংসার চলছে। আমার দোকানে মালামাল তেমন একটা নাই। টাকার অভাবে মালামালও কিনতে পারি না, দোকানও আর একটু বড় করতে পারি না। টাকার অভাবে ছেলে মেয়েদের ভালোভাবে পড়ালেখাও করাতে পারছি না। বড় মেয়ে তানিয়া আক্তার (১৬) এসএসসি দিবে। ছেলে তানভির সবার ছোট। হাত না থাকার কারণে আমাকে দোকানে সাহায্য করে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোন সুযোগ সুবিধা পাই না। চার সন্তান আর আমরা দু‘জন মিলে ছয় সদস্যের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে বিধায় আমি প্রধান মন্ত্রী ও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সুদৃষ্টি ও সহানুভূতি কামনা করছি।’ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন রিপন জানান, ‘জাহাঙ্গীর গাজী ভূমিহীন, তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। অতি কষ্টে ছেলে মেয়েকে পড়ালেখা খরচ চালাচ্ছেন।’ খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান