দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ

ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতার মতো ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার টানা চতুর্থ দিনের মতো সারা দেশে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

ইউএনবি প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন রাস্তায় নেমে ধর্ষণকারীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে  প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো মানুষের মনে জমে থাকা ক্ষোভকে বিক্ষোভে রূপ দিয়েছে।

আজ ঢাকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ডসহ ধর্ষণকারীদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেয়।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে মানববন্ধনে অংশ নেয়ার পর রাস্তা ছেড়ে চলে যায়।

অন্যদিকে, ছাত্র ইউনিয়ন, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ স্কাউটবোর্ডিং কমিউনিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক শতাধিক সদস্য ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্রুত বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।

বিক্ষোভকারীরা ‘ধর্ষণকারীদের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের হাত ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষকের প্রতি দয়া নেই’ এবং ‘দয়া করে বলুন, এরপর কি আমি?’ এ ধরণের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কিছু শিক্ষার্থী শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রতিবাদকারীরা দেশজুড়ে ধর্ষণ বন্ধে ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগের দাবিও করেন। তারা ঘোষণা দেন যে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে তাদের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশ জুড়ে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিবিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠে। ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আজ গাজীপুরে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী রাজবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং মানববন্ধনে অংশ নেন।

লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা শেখ ফজলল করিম পাঠাগারের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকার তরুণ প্রজন্ম।

এ সময় বক্তারা বলেন, দেশে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য ধর্ষকদের প্রশ্রয় দাতাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশে আইন করে ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের ক্রসফায়ারেরও দাবি জানান তারা।

ফরিদপুরে জেলা যুবদল শহরের আদালত প্রাঙ্গণে নারী, শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানির সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে।

সারা দেশে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে মানববন্ধন করেছে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে দুপুরে ভোলা সচেতন নাগরিক পরিষদের আয়োজনে শহরের কে জাহান মার্কেটের সামনে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে শহরের বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

যশোরে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে মানববন্ধন করে। এ সময় তারা ধর্ষণকারীদের কোনো আইনি সহায়তা না দেয়ার শপথ করেন।

এছাড়া, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে এশিয়ান মাদার চাইল্ড অ্যান্ড সেফটি ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট ব্লাড ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন পালন করে।