দেশে করোনাভাইরাসে কমেছে আক্রান্তের হার আর বেড়েছে সুস্থতার হার

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৫৯তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও হার কমেছে। বেড়েছে সুস্থতার হারও। ২৪ ঘন্টায় ১৩ হাজার ১৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৬১৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩৭৮ জন কম শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৪ হাজার ৭৫১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৯৯৫ জনের দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ কম। আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৯০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ১১৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৮২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ২ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪২ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৫৫৭ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯২ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫৫০ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৬৫৮টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮৬টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ১৬২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৫১ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৫৮৯টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ জন এবং ১৩ জন নারী। এখন পর্যন্ত পুরুষ ২ হাজার ৮১৩ জন; ৭৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৪৪ জন; ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশী বয়সী ২৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত বয়সের হিসাবে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছে ১৯ জন, শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯১ জন, ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২২৭ জন, ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৮৭ জন, ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৮ জন, ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১ হাজার ৬৯১ জন, ৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৭ জন, বরিশালে ৩ জন, সিলেটে ৪ জন এবং রংপুরে ২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪১ জন এবং ৩ জন বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এখন পর্যন্ত মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭০০ জন, ৪৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৮২৫ জন, ২৩ দশমিক ১৯ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ২২৯ জন, ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২৭৮ জন, ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১৩৮ জন, ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৬৬ জন, ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১৪৩ জন, ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ; ময়মনসিংহ বিভাগে ৭৮ জন, ২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮১৩ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ৭০৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮৩৫ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৪০ হাজার ৩১২ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬০ হাজার ২০ জনকে।

প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৪৩২ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৪০৮ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৪ লাখ ৯ হাজার ১৬১ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৩ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৯০২ জন।

ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৫২টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৩১ জন ও শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৮২১টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩০৫টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ২০১ জন ও শয্যা খালি আছে ১০৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৬৯ জন ও শয্যা খালি আছে ৫১৩টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৩ জন ও শয্যা খালি আছে ২৬টি।

সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৪৮ জন ও শয্যা খালি আছে ৫ হাজার ৫৮৮টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৯টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৩ জন ও শয্যা খালি আছে ১০৬টি । সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৭০টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৩৪৮ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৯২২টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৩টি, রোগী ভর্তি আছে ৩০৭ জন এবং খালি আছে ২৩৬টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫৯৩টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩৫০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৬০টি।

০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া www.dghs.gov.bd Gi CORONA কর্ণারে “করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ” লিঙ্ক অথবা http:/app.dghs.gov.bd/covid19-complain লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৫৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০০ জন, রংপুর বিভাগে ১৩৫ জন, খুলনা বিভাগে ২৯৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১০ জন, সিলেট বিভাগে ৬০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছেন ৪২ জন।

গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৮টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ১৫১টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪২৬টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৯৩৫টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৯টি।

করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৩১৯ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৬ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্য কর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৭২৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১২ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৩৭০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৮২২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৩১ জন এবং এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৫৬৪ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১২ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৮৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ৮৩৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৭ জন। খবর-বাসস

আাজকের বাজার/আখনূর রহমান