নাটোরে শত কোটি টাকার শিম উৎপাদন

চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় ৩০ হাজার টন শিম উৎপাদন হচ্ছে। এক হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদিত এই শিমের বাজার মূল্য দেড় হাজার টাকা মণ দরে শত কোটি টাকার অধিক। অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাটোরের শিম বিপণনের কার্যক্রম চলবে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ১ হাজার ৫০০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি মৌসুমে শিমের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৪৮ হেক্টর, লালপুরে ১৪২ হেক্টর, নাটোর সদরে ১২০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৫৩ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪০ হেক্টর, সিংড়ায় ২২ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২০ হেক্টর। আশা করা হচ্ছে এবার প্রায় ৬০ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে।

শিম উৎপাদন ও বিপণনে প্রসিদ্ধ বড়াইগ্রাম উপজেলার শিম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিঘাপ্রতি শিম উৎপাদনে খরচ হয় গড়ে ৩০ হাজার টাকা। আগাম অথবা ভাল ফলন হলে উৎপাদিত শিম লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।

মূলত জমিতে বোরো ধান কাটার পর এপ্রিল-মে মাসে শিমের চারা রোপন করা হয়। প্রতি বিঘাতে প্রায় ২ ফুট উচ্চতায় ২৫০ থেকে ৩০০টি মাটির ঢিপি বানিয়ে চারা রোপন করা হয়। মাচায় উঠে যাওয়া গাছ থেকে অক্টোবর মাস থেকে ফলন আসতে শুরু করে। কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে দুইবার করে গাছ থেকে শিম সংগ্রহ করেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলার সাইদুর রহমান তার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের অটোবেশী শিম আবাদ করেছেন। অক্টোবর মাস থেকে সবুজ রঙের এই শিম বিক্রি করছেন তিনি। লালচে রঙের রূপভান নামে আগাম জাতের শিম চাষকারী রাজেন্দ্রপুর এলাকার গোলজার আলী বলেন, এবার সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে ও বৃষ্টির আধিক্য থাকায় ফুল পচা রোগ দেখা দেয়। তা সত্ত্বেও বিঘায় অন্তত ৬০ মণ ফলন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

রাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া বলেন, ফুলের পচন রোধ করতে কৃষকদের ছত্রাক নাশক ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেয়ায় সুফল পেয়েছেন কৃষকরা।
জেলার প্রায় প্রতিটি হাটেই বিভিন্ন সবজির মধ্যে শিমের উল্লেখযোগ্য কেনা-বেচা চোখে পড়ার মতো। হাট ছাড়াও স্থানীয় বাজারগুলোর আড়ৎ থেকে পাইকারী ক্রেতারা শিম সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করছেন। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য নাটোর-পাবনা সীমান্তের মূলাডুলি হাট প্রসিদ্ধ। মূলাডুলিতে প্রায় ১০ জন আড়ৎদার কৃষক পর্যায়ের শিম কিনে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই হাট থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি শিম বোঝাই ট্রাক নাটোরের বাইরে যাচ্ছে।

মূলাডুলি হাটের আড়তদার মো. দুলাল বলেন, আমার আড়তের শিম যাচ্ছে ঢাকার কাওরান বাজার ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বর্তমানে বাজার দর মণপ্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। আড়তদার মো. আলম বলেন, অক্টোবর মাস থেকেই নাটোরের শিম বাইরে যাওয়া শুরু হলেও বর্তমানে তা ভরা মৌসুম। জানুয়ারি পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।

বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বাসসকে বলেন, কৃষকদের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতার সমন্বয়ে বড়াইগ্রামের কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্যময়তা এসেছে, এসেছে উদ্ভাবনের মাধ্যমে উন্নয়ন। অধিক সুফল এবং মুনাফা কাটতির কারণে তারা শিম চাষে বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সুত্র: বাসস