নিউইয়র্কে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ

ইসরাইলের বিচার দাবিতে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ।তারা বিভিন্ন স্লোগানে ইসরাইলের বিচার দাবি করছে।

জেরুজালেম মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিাবাদ ও ‘রিটার্ন মার্চ’ এর অংশ হিসেবে সোমবার (১৪ মে) গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালালে ছয় শিশুসহ অন্তত ৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আহত হয় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।এর প্রেক্ষিতেই আজ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হাজারো মানুষ।

ব্রুকলিনের ‘বে রাইজ’ এর রাস্তার পাশে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের একজন নারডেন কিসওয়ানি বলেন, ‘তারা ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিলে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি।’

সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ এর অংশ। এটা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে চলছে।’

আরেক ফিলিস্তিনি কর্মী ন্যান্সি মনসুর বলেন, ‘গত ৭০ বছর ধরে ইসরাইল যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তার জন্য দেশটিতে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এখানে প্রত্যেক ফিলিস্তিনিকে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে এবং ফিলিস্তিনে আমাদের পরিবারের সদস্যরা এখনও বেঁচে আছে কিনা তা দেখার জন্য খবরের দিকে নজর রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষতঃ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আরব বিশ্বের নেতৃবৃন্দের জন্য লজ্জাজনক, যারা এই বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।’

এদিকে, মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরেরকে প্রতিবাদে আঙ্কারায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে। তুর্কি বিক্ষোভকারীরা এসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে এবং ইসরাইল-গাজা সীমান্তে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেন।

বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন। এসব ব্যানারে লেখা ছিল: ‘আল কুদুস মুসলমানদের’। তারা পবিত্র যুদ্ধ এবং শহীদ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দেয়।

একজন প্রতিবাদকারী আমেরিকানদের ‘কুকুর’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘জেরুজালেম আমাদের, এটা আমাদের হবে।’

হতাহতদের স্মরণে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ইসরাইলি সৈন্যদের গুলিতে এক দিনেই এত সংখ্যক ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি দূত গাজায় যা ঘটছে তাকে এক বর্বরোচিত আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যেদিন ইসরাইলে তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিল, সেদিন এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটলো গাজায়।

২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলের হামলার পর এক দিনে এত বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুজালেমে তারা গড়ে তুলেছে দু’লাখ ইহুদির জন্যে বহু বসতি। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।

একসময় জেরুজালেমে বহু দেশের দূতাবাস ছিলো। কিন্তু ১৯৮০ সালে ইসরাইল জেরুসালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করার পর বহু দেশ সেখান থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নেয়।

কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

আরজেড/