নীলফামারী সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বেকারদের স্বপ্ন পূরণের সারথি

জেলার বেকার যুবকদের স্বপ্ন পূরণের সারথি নীলফামারী সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ইতিমধ্যে ওই কেন্দ্রের প্রশিক্ষণে কর্মসংস্থানের সুযোগে ২৩ জন পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। আরও বিভিন্ন দেশে যাওয়ার তালিকায় চূড়ান্ত হয়েছেন ১৫জন। স্বপ্ন পূরণে তারা পাড়ি জমাবেন জাপান, চীন, ওমান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ওই কেন্দ্রে গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং প্রশিক্ষণ নিয়ে জর্ডানে গেছেন ১ নারী, হাউস কিপিং প্রশিক্ষণ নিয়ে ওমানে ৪ জন, সৌদি আরবে ১৫জন এবং ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়ে দুবাইয়ে গেছেন ৩ জন। এছাড়া ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ২ নারীসহ ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন স¤প্রতি। দুবাই ২৩, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭জন রয়েছেন যাওয়ার তালিকায়।

সম্প্রতি প্রাণ ফিরে পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। শুরুতে ছিল ৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ ট্রেড এবং নবম শ্রেণী-দশম শ্রেণী অধ্যয়নের দুটি ভোকেশনাল ট্রেড। এখন ১৫টি ট্রেডে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে সেখানে। চালু রয়েছে পাঁচটি ভাষা শিখন কোর্স। ভোকেশনালে ৭টি ট্রেড নিয়ে এখন দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে কেন্দ্রটি(বগুড়া টিটিসিতে ১১টি ট্রেড রয়েছে)। সেখানে নারীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করেছেন জেলার উত্তরা ইপিজেডে।

প্রতি ট্রেডে ৪০জন করে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে এপর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৮১২জন। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আর্কিটেকচার ড্রাফটিং, উইথ অটোক্যাড, কম্পিউটার অপারেশন, গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল হাউজওয়্যারিং, কনজুমার ইলেকট্রনিক্স, মেশিন টুলস অপারেশন, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, মোটর ড্রাইভিং, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মোবাইল সার্ভিসিং, সিএনসি অপারেশন, সলিড ওয়াকার্স অ্যান্ড মাস্টারক্যাম, ম্যাশন, হাউস কিপিং এবং প্রাক বর্হিগমন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বেকার যুবক-যুবতীরা। এছাড়া জাপানী, কোরিয়ান, ইংরেজি এবং চাইনিজ ভাষা শেখানো হচ্ছে সেখানে। ট্রেড ভেদে একমাস থেকে শুরু করে ছয় মাস মেয়াদে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন অষ্টম শ্রেণী থেকে থেকে এইচএসসি পাস করা যুবক-যুবতীরা।

ভাষা শিখে জাপান যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন শহরের ধনীপাড়া এলাকার ঈশিতা বানু পপি। তিনি বলেন,“আমার পক্ষে জাপান যাওয়ার চিন্তা করা ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সে স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে। সেখানে গিয়ে আমি দেখাতে চাই মেয়েদেরও সক্ষমতা রয়েছে”। তার মতো জাপান গমনে চূড়ান্ত হওয়া জেলা শহরের গাছবাড়ি এলাকার গোলাম আযম সাজু বলেন,“আমি অনার্স স¤পন্ন করে অনেক চেষ্টা করেও সরকারী চাকুরী পাইনি। টিটিসিতে ছয় মাসের ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানে জাপান যাওয়ার তালিকায় রয়েছি”। জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষক মাসুদ আলম জানান, জাপানে বাংলাদেশীদের চাকুরীর সুযোগ অনেক। ভাষা না জানায় আমরা সেটা ধরতে পারছি না। নীলফামারী টিটিসিতে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হওয়ার বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরির কারখানা তৈরি হয়েছে টিটিসি। গ্রামের হাটে-বাজারে প্রচারণা চালিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বেকারদের আসতে উদ্বুদ্ধ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি উপজেলা থেকে এক হাজার বেকার যুবককে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছি আমরা।

জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এস.এম শফিকুল আলম বলেন, অদক্ষ হয়ে দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বেকারেরা। টিটিসি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাটানো হচ্ছে, জেলার জন্য এটি সুখবর। এছাড়া টিটিসির মাধ্যমে বিদেশ গমনে কোন ঝুঁকি নেই।

তিনি বলেন, দেশের টিটিসির মধ্যে একমাত্র নীলফামারীতে চাইনিজ ভাষার প্রশিক্ষণ কোর্স চালু রয়েছে বলে আমি জেনেছি। এটির প্রভাবে প্রশিক্ষণার্থীরা উত্তরা ইপিজেডসহ বিভিন্ন ইপিজেডে চাকরি করতে পারছেন ভালো বেতনে। খবর নিয়ে জানতে পেরেছি কেন্দ্রটিতে ১৮জন কর্মকর্তার স্থলে ১৩জন এবং ২২জন কর্মচারীর স্থলে ১১জন কর্মরত আছেন। গতি বাড়াতে পূর্ণ জনবলের দাবি জানাচ্ছি। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান