পদ্মা সেতুর উচ্চক্ষমতার ভাসমান ক্রেন কুতুবদিয়ায় পৌঁছেছে

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য উচ্চক্ষমতার ভাসমান ক্রেন কুতুবদিয়া চ্যানেলে এসে পৌঁছেছে। চীন থেকে আসা ক্রেনটি কাস্টমস’এর যাবতীয় কাজ সম্পন্নের পর এক সপ্তাহের মধ্যে মাওয়ায় এসে পৌছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্র বাসসকে জানায়, শুক্রবার রাতে ক্রেনটি কুতুবদিয়া চ্যানেলের অদূরে নোঙর করা হয়। ক্রেনটি মাওয়ায় পৌঁছানোর পুরো প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ শনিবার কাষ্টমস ক্লিয়ারেন্সের কাজ শুরু হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বড় ধরনের এই ভাসমান ক্রেন পরিবহনের মতো নৌযান পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের বিশেষ টাগ বোট দিয়ে এটি মাওয়ায় নেয়া হবে। মাওয়ায় পৌঁছাতে এটির সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।

৩ হাজার ৬শ’ টন ক্ষমতার এই ক্রেন পদ্মা সেতুর কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে। গত ১২ অক্টোবর চীনের জোহাও থেকে ভাসমান এই ক্রেন মাদার ভেসেলে করে বাংলাদেশে রওনা হয়। এটি পদ্মা সেতুৃর সুপার স্ট্রাকচার স্থাপন করবে। এই ক্রেন সেতুর প্রতিটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) সরাসরি পিলারে বসাতে পারবে। এক একটি স্প্যানের ওজন প্রায় ২ হাজার ৯শ’ টন। চীন থেকে আসা এই ভাসমান ক্রেনের ধারণ ক্ষমতা ৩ হাজার ৬শ’ টন। বাংলাদেশে ভাসমান ক্রেন হিসেবে কোরিয়ান উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ও নির্ভীকের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৪শ’ টন। আর চীনা এই ক্রেনের ক্ষমতা আড়াই গুণেরও বেশী।

সুত্র জানায়, ভারি ক্রেনটি চলে আসায় এখন সুপার স্ট্রাকচার স্থাপানের সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। এখন ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। এই দুই পিলারের ওপরই বসবে প্রথম সুপার স্ট্রাকচার। ৩৭ নম্বর পিলারে কাজের অগ্রগতি অনেক এগিয়ে গেছে। পিলার সম্পন্ন হওয়ায় এখন পিয়ারের কাজের প্রস্তুতি চলছে। এই পিয়ার হলেই পিলার সম্পন্ন হবে। পরে বসবে সুপার স্ট্রাকচার। পদ্মার ৩৭ নম্বর পিলারের পাইল গ্রুপ সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকেই আরো দেড়শ’ ফুট (৩৫ মিটার) উঁচু পিলার বসবে। আর পিলারের উপরেই বসবে সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান)।

এই পিলার গ্রুপটির দৈর্ঘ্য ১২৮ মিটার। এর মধ্যে নদীর তলদেশ থেকে মাটির নিচে রয়েছে ১২২ মিটার। আর ৬ মিটার পানির মধ্যে। বর্তমান পানির লেভেল থেকে পাইল গ্রুপটির উপরি অংশ রয়েছে ৬ ফুট পানির নিচে। এখানে যাতে পানি ঢুকতে না পারে এমনভাবেই রাখা হয়েছে। আর পাইল গ্রুপে নামার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। পদ্মা সেতুর পাইল গ্রুপ সম্পন্ন হওয়া এটি প্রথম পিলার। এখান থেকেই পিয়ার তৈরীর কাজ চলছে। ৩৮ নম্বর পিলারের কাজও দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে। এখানে চারটি পাইল সম্পন্ন হয়েছে। বাকী দু’টিও শেষ হওয়ার পথে।

সম্প্রতি জার্মানী থেকে আসা ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার নতুন হ্যামার ৩৮ নম্বর পাইল স্থাপনে ব্যস্ত রয়েছে। আর পুরনো ২ হাজার ৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি এই সুযোগে সার্ভিসিং করা হচ্ছে। নতুন হ্যামারটি সপ্তাহখানেক আগে চালু করা হয়েছে। এটির আউটপুট ভালো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এদিকে পদ্মা সেতুর অন্যান্য প্যাকেজেও অগ্রগতি রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসনের কাজও পুরোদমে শুরু হয়েছে। বুধবার জাজিরা প্রান্তে ৮শ’ কেজির প্লাস্টিক বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে কয়েকদিন আগে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। উচ্চক্ষমতার এই ড্রেজার ঘন্টায় ৪ থেকে ৫ হাজার মিটার কিউবিক মিটার মাটি অপসারণ করছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলেই ফেলা হবে কয়েক ধাপে বস্তা। পাঁচ লেয়ারে সেখানে ৮শ’ কেজির বস্তা ফেলা হবে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী বাসস’কে জানান, মাওয়া প্রান্তে সেতুর আধুনিক টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন। তবে এখনো অফিসিয়ালি এটি বুঝে নেয়া হয়নি। এ ছাড়া জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮৩ ভাগ।

জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের কাজও পুরোদমে চলছে। সংযোগ সেতুর পাইলের তলদেশের অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাধুনিক ইকো-সাউন্ডার যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই যন্ত্র ব্যবহারসহ নানা কারণে জাপানী উচ্চপর্যায়ের টেকনিশিয়ান মাওয়ায় দশ দিন অবস্থানের পর শুক্রবার সকালে ফিরে গেছেন। চার সদস্যের এই দলটির চার দিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তাদের ১০ দিন অবস্থান করতে হয়েছে। এতে কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।

সুত্র: বাসস