পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়াকাপ শুরু ভারতের

ভুবনেশ্বর কুমারের বোলিং ও হার্ডিক পান্ডিয়ার অলরাউন্ড নৈপুন্যে এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে আবারো হারালো ভারত। গতরাতে ‘এ’ গ্রুপের প্রথম ও টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত ৫ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। এর মাধ্যমে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে পাকিস্তানের কাছে এই ভেন্যুতে ১০ উইকেটে হারের প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেল ভারতের।
ম্যাচে ৪ ওভার বল করে ২৬ রানে ৪ উইকেট নেন ভুবনেশ্বর। আর ৪ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেয়ার পর, ব্যাট হাতে শেষদিকে ১৭ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ভারতকে জয় এনে দেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া পান্ডিয়া।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেয় ভারত। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানের ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে আউট করেন ভারতের পেসার ভুবেনশ^র কুমার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান রিজওয়ান।
তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট শিকারের স্বাদ পান ভুবেনশ^র। ব্যক্তিগত ১০ রানে থাকা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে বিদায় করেন তিনি।
দলীয় ১৫ রানে বাবরকে হারানোর পরও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন রিজওয়ান ও তিন নম্বরে নামা ফখর জামান। জামানকে ১০ রানে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন আবেশ খান। ১৯ বলে ২৭ রানের জুটি গড়েন রিজওয়ান-জামান।
প্রথম দুই উইকেটে বড় জুটি না হলেও, তৃতীয় উইকেটে ৩৮ বলে ৪৫ রান তুলতে পারেন রিজওয়ান ও ইফতেখার আহমেদ। এতে ১২ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮৭।
এরপর পাকিস্তানকে চেপে ধরেন হার্ডিক পান্ডিয়া। পরপর দুই ওভারে ৩ উইকেট নেন তিনি। রিজওয়ান ৪২ বলে ৪৩, ইফতেখার ২২ বলে ২৮ ও খুশদিল শাহ ২ রান করে পান্ডিয়ার শিকার হন। এতে ৯৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
পরবর্তীতে ডেথ ওভার শুরু হলে, পাকিস্তানের বড় স্কোরের পথ বন্ধ করে দেন ভুবেনশ^র। দুই ওভারে পাকিস্তানের ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। এতে ১৯ ওভারে ১২৮ রানে ৯ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
তবে শেষ উইকেটে ৮ বলে ১৯ রান তুলে পাকিস্তানকে লড়াই করার মত পুঁিজ এনে দেন হারিস রউফ ও শাহনাওয়াজ দাহানি। ১ বল বাকী থাকতে গুটিয়ে যাবার আগে ১৪৭ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। শেষ ব্যাটার দাহানিকে আউট করে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেন ভারতের পেসার আর্শদীপ সিং। ২টি ছক্কায় ৬ বলে ১৬ রান আউট হন দাহানি। ৭ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন রউফ।
পান্ডিয়া ২৫ রানে ৩টি ও আর্শদীপ ৩৩ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৪৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ধাক্কা খায় ভারত। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তানের পেসার নাসিম শাহর বলে শুন্য রানে বোল্ড হন ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুল।
রাহুলের বিদায়ে উইকেটে আসেন শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা বিরাট কোহলি। রাহুলের মত খালি হাতে ফিরতে পারতেন কোহলিও। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে দ্বিতীয় স্লিপে কোহলির ক্যাচ ফেলেন জামান। জীবন পেয়ে ফর্ম ফিরে পাবার লড়াই শুরু করেন কোহলি। দারুন শটে পাওয়ার প্লেতে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন কোহলি। এতে পাওয়ার প্লেতে ৩৮ রান পায় ভারত। এসময় অন্যপ্রান্তে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তখন ১১ বলে ৪ রান করেছিলেন রোহিত।
অষ্টম ওভারে লং-অন দিয়ে প্রথম ছক্কা মারেন রোহিত। তবে ওভারের শেষ বলে স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজের বে ১৮ বলে ১২ রান ভারত দলপতি। এর আগে দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত-কোহলি ৪৬ বলে ৪৯ রান যোগ করেন।
রোহিত ফেরার এক ওভার পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন কোহলি। রোহিতের মত একইভাবে বিদায় নেন তিনি। নাওয়াজের বলে একই শটে লং-অফে ইফতেখারকে ক্যাচ দেন কোহলি। আউট হওয়ার আগে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৯ বলে ৩৩ রান করেন এ তারকা ব্যাটার।
ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামেন রবীন্দ্র জাদেজা। চতুর্থ উইকেটে সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে ৩১ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন জাদেজা।
১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসিমের দ্বিতীয় শিকার হন ১৮ বলে ১৮ রান করা সুর্য। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে ভারতের দরকার ছিল ৩৪ বলে ৫৯ রান ।
এ অবস্থায় ক্রিজে জাদেজার সঙ্গী হন পান্ডিয়া। পরের ১৬ বল থেকে ২৭ রান তুলেন জাদেজা ও পান্ডিয়া। শেষ ৩ ওভারে ৩২ রানের সমীকরন দাঁড় করায় ভারত।
নাসিমের করা ১৮তম ওভার থেকে জাদেজার ১টি করে চার-ছক্কায় ১১ রান পায় ভারত। এতে জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ২১ রান দরকার পড়ে টিম ইন্ডিয়ার।
১৯তম ওভারে রউফের শেষ চার বলে তিনটি চার মারেন পান্ডিয়া। ওভার থেকে ১৪ রান আসায় জয় হাতের নাগালে চলে আসে ভারতের। শেষ ওভারে ৭ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে নাওয়াজের প্রথম ডেলিভারিতেই বোল্ড হন আত্মবিশ্বাসী জাদেজা। ২টি করে চার-ছক্কায় ২৯ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। পরের দুই বল থেকে আসে ১ রান। এতে শেষ ৩ বলে ৬ রান দরকার পড়ে ভারতের।
চতুর্থ বলে লং-অন দিয়ে ছক্কা মেরে ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ১৭ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকা পান্ডিয়া। পাকিস্তানের নাওয়াজ ৩টি ও নাসিম ২টি উইকেট নেন।
আগামী ৩১ আগস্ট গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হংকংয়ের মুখোমুখি হবে ভারত। আর ২ সেপ্টেম্বর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান ও হংকং।