পিরোজপুরে ৮২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের বেকুটিয়া সেতু

পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের বেকুটিয়া সেতু নির্মাণ কাজের প্রায় ৬০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।
২০২১ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এ সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে ইতোপূর্বে আশা প্রকাশ করা হলেও, করোনার কারণে এ সেতুর কাজে নিয়োজিত চীনা নাগরিকদের অর্ধেকেরও বেশী তাদের দেশে চলে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করে উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
৮২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন সরকারের অনুদান সহায়তায় বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর উপর ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ, ভুমি উন্নয়ন, স্থাপনা অপসারণের প্রাথমিক কাজ শেষ করে মূল সেতু নির্মাণের কাজের প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে নির্মাণ সংস্থা। এই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোল থেকে যশোর-খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর-ঝলকাঠী-বরিশাল-ভোলা এবং দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা এবং নবনির্মিত গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা অঞ্চলের কোটি-কোটি মানুষ আনন্দিত হয়েছে। স্বপ্নের সেতু পদ্মার সাথে প্রায় একই সময় শেষ হবে বেকুটিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০১৭ সালের জুন মাসে রাজধানীর সড়ক ভবনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইংয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পরিমল বিকাশ সুত্রধর এবং চীন সরকারের পক্ষে আর্ন্তজাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর জিয়াং জিং ৮ম বাংলাদেশ-চীণ মৈত্রী সেতু নির্মাণের চুড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রাথমিকভাবে এই মুল সেতু নির্মাণের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২০ কোটি টাকা। যার পুরোটাই চীন সরকার অনুদান হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে। মূল সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহনের মূল্য এবং সড়ক নির্মাণের খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া নির্মাণ কাজে বিদ্যুৎ, মাটি ভরাট এবং চীনের প্রকৌশলীবৃন্দসহ চীনা কর্মীদের আবাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। পিরোজপুর শহরে ৫ কিলোমিটার পূর্বে কঁচা নদীর ভাটিতে বেকুটিয়া ফেরীঘাটের সন্নিকটে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। বেকুটিয়া ফেরীঘাট থেকে ৮৩৫ মিটার দক্ষিণে এবং কাউখালী প্রাান্তের ফেরীঘাট থেকে ১১৫ মিটার উত্তরে ৯৯৮ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত এবং সেতুর উভয়পাশে মোট ১৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যাবতীয় নদী শাসন, আবহাওয়া, বাতাসের গতি, নদী ভাঙন সহ অন্যান্য বিষয় চীনা বিশেষজ্ঞদল কয়েকবার জরিপ করে এসে এলাকা ঘুরে সবকিছু চুড়ান্ত করার পরপরই এ সকল কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়। এদিকে দীর্ঘদিনের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘব হতে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে-মুখে এখন পদ্মা ও বেকুটিয়া সেতু। বেকুটিয়া সেতুর কাজ সমাপ্ত হলে বেকুটিয়া নৈকাঠী ও চরখালী-টগড়া এ দুটি ফেরী সার্ভিসের আর কোন প্রয়োজন হবে না। এদিকে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা এবং সমুদ্র সৈকত সাগর কন্যা কুয়াকাটার সাথে সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোল এবং সমুদ্র বন্দর মংলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে এই বেকুটিয়া সেতুটি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের পিরোজপুরের নির্বার্হী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, ইতোমধ্যেই প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরো জানান এই সেতুটি নির্মিত হলে পিরোজপুর জেলার চারটি উপজেলার সাথে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপিত হবে। এছাড়া এ সেতুটি পদ্মার এপাড়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুতে পরিণত হবে। পিরোজপুরের সম্মিলিত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকিব জানান, বেকুটিয়া সেতুটি উন্মুক্ত হলে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান অকল্পনীয়ভাবে উন্নীত হবে।