প্রধানমন্ত্রীর মুখে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য মানায় না: ফখরুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বেগম খালেদা জিয়াকে ‘পাগল’ বলার পর বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টা বক্তব্যে দলের মহাসচিব বলেছেন, মাথায় সমস্যা ক্ষমতাসীন দলেরই।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার ১১ জানুয়ারি নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অশ্রাব্য, কাণ্ডজ্ঞানহীন, কুরুচিপূর্ণ’ আখ্যা দেন ফখরুল।

গত ২ জানুয়ারি রাজধানীতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে পদ্মাসেতুতে না উঠতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। সেদিন তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে এই সেতু হবে না। কোনো একটা যদি জোড়াতালি বানায়, সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না, অনেক রিস্ক আছে।’

খালেদার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পরদিন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া কিছু বুঝেন না, যখন যা মুখে আসে বলে দেন। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বলেন, ‘খালেদার মাথায় কীসের ঘিলু’। দুই দিন পর দলীয় আরেক সভায় বিএনপি নেত্রীর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন প্রধানমন্ত্রী।

এর ধারাবাহিকতায় বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ধরনের পাগলের কথায় কারও বেশি মনোযোগ না দেওয়াই ভালো। কারণ কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না।’

জবাবে ফখরুল কারও নাম উল্লেখ না করে ক্ষমতাসীন দলের মাথায় ‘গোলযোগের’ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের অনাচার-অপকর্মের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। খালেদা ভীতির কারণেই ক্ষমতাসীনদের মস্তিষ্কে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যেন গণতন্ত্রের বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ। এই মূহূর্তে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তীর্যক ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনভিপ্রেত বা দুঃখজনকই নয়, বরং এটি রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় দানা বাঁধবে।

‘বিদেশে খালেদা পরিবারের সম্পদের তথ্য মিথ্যা’

খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের দেশের বাইরে ‘সম্পদের পরিমাণ’ও বুধবার সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার দাবি, দেশের বাইরে এই পরিবারের সম্পদের পরিমাণ এক হাজার মিলিয়ন ডলার।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি, সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে খালেদা জিয়া ও তার ছেলেদের নামে। ট্যাক্স হেভেনে জিয়া পরিবারের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা।

এসব তথ্যকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ দবি করে ফখরুল বলেন, ‘এগুলো জনগণ বিশ্বাস করবে না।’ প্রধানমন্ত্রী সংসদে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দিয়ে বেআইনি কাজ করেছেন বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

২০১৫ সালেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের হিসাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা যোগ হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এই টাকা কার সেটা দেশবাসী জানে। কারণ, এই সরকার অর্থপাচার রোধে তৎপরতা দেখায়নি।’

‘তবে কানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের মালিক কারা সেটিও দেশবাসী জানে। তাই বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদের কাল্পনিক ও মনগড়া কাহিনি রচনা করে কোন ফায়দা হবে না।’

ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের সর্বত্র নির্বাচনের আওয়াজ দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিষাক্ত-প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়ে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক নির্বাচনী পরিবেশকে করছেন কুলষিত।’

‘জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে মিথ্যা ও অপপ্রচারকে কায়েমী ও দৃঢ়মূল করতে ভ্রান্তনীতি প্রয়োগ করছেন ক্ষমতাসীনরা। মিথ্যাকে কখনোই সত্য বলে চালানো যাবে না।’

গত ৭ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনেও দেশের বাইরে খালেদা পরিবারের অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলেন প্রধানমন্ত্রী। একে মিথ্যা দাবি করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পাঠান খালেদা জিয়া। এতে এক মাসের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই ধরনের নোটিস তিনি অনেক দেখেছেন। সময় মতো এর জবাব দেয়া হবে।

আজকের বাজার:এলকে/ ১১ জানুয়ারি ২০১৮