বর্তমান সরকারের সময়ে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করছে। আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ইতালি সফরে থাকায় তার প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন,“আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগ জনগণের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আমরা জনগণের মাঝে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃত আসামিরা যাতে সাজা পায় এবং নিরপরাধীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সজাগ রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা বিচার বিভাগে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, অপরাধীর কোন দল নেই তার পরিচয় কেবলই অপরাধী এবং অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার বিচার হবেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৯(২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। বর্তমানে কর্মরত বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। ইতিমধ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৬ জন, হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া অধস্তন আদালতে ৭৬৮ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৩তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ১৪তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে আরও ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ৮৮৬টি পদ সৃজনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দ্রুত নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, এজলাস স্বল্পতা দূর করে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ব্যবহার করে বিচার কাজে গতিশীলতা আনায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অধস্তন আদালতের জন্য ৪২টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি জেলায় সম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ১৪টি জেলায় ভবন নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নতুন ১২তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আদালতে মামলার বিচার নিষ্পত্তির পাশাপাশি নতুন মামলা দায়েরের হার কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই পদ্ধতিকে ফলপ্রসু করতে সারাদেশে জেলা জজ আদালতে একজন করে সরকারি সিনিয়র/সহকারী জজ পর্যায়ের বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সারাদেশে ২৮ হাজার ৯৫৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রচলিত ব্যবস্থার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি করার জন্য জাপানের সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া অসহায় ও দুস্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে ইতিমধ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৪ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ডিজিটাইজেশন করার লক্ষ্যে আমরা ই-জুডিশিয়ারি শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ৪ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়ার চক্রান্ত করা হয়েছিল। হলি আর্টিজান মামলার আসামিদের মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করে বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে এই চক্রান্ত রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া রিশা হত্যা মামলা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া খানম ও আব্দুল করিম রাজীবের মামলা, গাইবান্ধা সংসদ সদস্য হত্যাসহ বহুল আলোচিত মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার বিচার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছ। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান