বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে বিএসইসির ৪ সুপারিশ

ইউনিলিভারসহ বেশ কিছু কোম্পানি এ দেশে চুটিয়ে ব্যবসা করলেও এদের মুনাফার কোনো ভাগ পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। কোম্পানিগুলো শতভাগ মুনাফা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই। ২০০৯ সালের শেষভাগে গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির পর আর কোনো বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসেনি।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে চারটি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারে আসতে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা, তালিকাভুক্ত হলে বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া, পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর উপর বাড়তি কর আরোপ ইত্যাদি।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এসব সুপারিশ করা হয়। চিঠিতে এসব কোম্পানি কী কারণে পুঁজিবাজারে আসছে না, সে বিষয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণও তুলে ধরে বিএসইসি।

উল্লেখ, যে কোম্পানির একাধিক দেশে ব্যবসা রয়েছে, সে কোম্পানিকে বহুজাতিক কোম্পানি বলে। এ ধরনের শতাধিক কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে মাত্র ডজন খানেক কোম্পানি আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এর একটি বড় অংশ আবার সামরিক সরকারের আমলে তাদের নির্দেশ বাধ্য হয়ে বাজারে আসে।

ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বিএসইসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বহুজাতিক কোম্পানির পুঁজিবাজারে না আসার কারণ:

বেশ কিছু কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। বিএসইসির বক্তব্য, তালিকাভুক্ত প্রত্যেক কোম্পানিকে আর্থিক হিসাব বিবরণীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএফআরএস) অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু অনেক বহুজাতিক এবং জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির বিএএস ও বিএফআরএস পরিপালনে অনীহা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ দেশের হিসাবের স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর উদ্যোক্তা ও পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তরে ৩ বছরের লক-ইন (নিষেধাজ্ঞা) থাকা। করপোরেট গাইডলাইনসের যথাযথ পরিপালনে অনীহা থাকা।

সিকিউরিটিজ সম্পর্কিত আইনের পরিপালনে প্রতি অনীহা থাকা।

বহুজাতিক এবং জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে আইনানুগ বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যহতি প্রদান।

বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে আনতে চার সুপারিশ:

আলোচিত সমস্যাগুলোর সমাধানের পরও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে অনাগ্রহ দেখালে সরকার চারটি বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মনে করে বিএসইসি।

বিএসইসির মতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা। সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থার মাধ্যমে মূলধনের একটি নির্দিষ্ট অংশ পুঁজিবাজার থেকে পাবলিক অফারের মাধ্যমে সংগ্রহের শর্ত আরোপ করতে পারে।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে তার সব কোনো না কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কিংবা সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত। তাই তাদেরকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বাধ্য করা যেতে পারে।

ওষুধ ও রসায়ন, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্য খাতের যেসব কোম্পানি রয়েছে; সেগুলোকে বেজা, বেপজা, ডিজিডিএ, বিইআরসি এবং আইডিআরএ, বিটিআরসিসহ অন্যখাতের প্রাথমিক রেগুলেটরের মাধ্যমে শর্তারোপ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে।

বিএসইসি বলছে, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। এই নিবন্ধনের সময়ে শর্তারোপ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তি করা যেতে পারে।

সরকার বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে তার মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ বা ১৫ কোটি টাকার বেশি; তা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে মুলধন উত্তোলন বাধ্যতামূলক করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা জারি করতে পারে।

ট্যক্সহলিডেসহ কর ও শুল্ক সুবিধার প্রণোদনা আরোপ করেও তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে বলে মনে করে বিএসইসি।

যেসব বিদেশি কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত; তাদের কর হার অ-তালিকাভুক্ত বিদেশি কোম্পানির কর হারের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম নির্ধারণ করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে সরকারী অংশ ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেসব বিদেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়; তাদের নগদ লভ্যাংশের ওপর বর্ধিত কর হার আরোপ করা যেতে পারে।