বাগেরহাটে চিংড়িতে মড়ক

আজকের বাজার ডেস্ক: বাগেরহাটে অজ্ঞাত রোগে ‘হোয়াইট গোল্ড’ খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে মড়ক লেগেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়ি চাষীরা। এভাবে মাছ মরতে থাকলে,দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা তাদের।

দুই সপ্তাহ আগে জেলার কয়েক হাজার ঘেরে হঠাৎ করে চিংড়ি মরতে শুরু করে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মৌসুমের শুরুতেই জেলার অধিকাংশ উপজেলার ঘেরে চিংড়িতে মড়ক লেগেছে বলে দাবি চাষী ও জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির। জেলার অধিকাংশ ঘেরের চিংড়িতে মড়ক দেখা দিলেও, মৎস্য বিভাগের কেউই তা প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ চাষীদের।

তবে কি রোগে ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না মৎস্য বিভাগ। তারা আক্রান্ত বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ করে, রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছে।

ফ্লাগুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘের প্রস্তুত করে, চাষীরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করেন। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতোমধ্যে ৬৬ গ্রেডে উন্নিত হয়েছে। জৈষ্ঠ্য মাসে চাষীরা এই চিংড়ি ধরে বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

মৌসুমের শুরুতে চিংড়িতে মড়ক দেখা দেওয়ায় হতাশায় পড়েছেন চাষীরা। তারা বলছেন চলতি বছরে লাভতো দূরের কথা, অধিকাংশ চাষীকে ঋণগ্রস্ত হতে হবে। এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে চাষীদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার আহবান চিংড়ি চাষী সমিতির।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের খোন্তাকাটা ও শশীখালীর বিলের অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। মরে যাওয়া চিংড়িতে লাল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় মাছের ঘেরে একই অবস্থা।

চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলা, রামপাল, মংলা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এবারের মড়ক বিষয়ে ঘের মালিকরা কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। এতে হাজার হাজার চাষী দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। জেলার অধিকাংশ চাষীরা চড়া সুদ ও ব্যাংকের ঝণ নিয়ে চিংড়ির চাষ করে থাকে। মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয় চাষীকে সর্বশান্ত করবে। তাই চিংড়ি চাষীদের তালিকা তৈরি করে,তাদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জিয়া হায়দার বলেন, মৌসুমের শুরুতে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেক কম। ঘেরগুলোতে এ মৌসুমে যে পরিমাণ পানি থাকার দরকার অনাবৃষ্টির কারণে তা নেই। ফলে প্রচণ্ড তাপদাহে পানি গরম হয়ে, অক্সিজেন কমে গেছে। অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রাও বেড়েছে। আর সে কারণেই বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এতে চাষীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তারপরও আমরা মারা যাওয়া চিংড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।

এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। জেলায় বাগদা চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/২০১৭