বাগেরহাটে মধুমতির ভাঙ্গনে নিস্ব দুটি গ্রামের অনেক মানুষ

জেলার মোল্লাহাটে মধুমতি নদী ভাঙ্গনের ভিটে-বাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিস্ব দুটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, পাকা সড়কসহ নানা স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ৩ হাজার ৪শ মিটার এলাকা। বাপ দাদার ভিটে-বাড়ি হারিয়ে নিস্ব পরিবারগুলো ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

বাগেরহাটের মোল্লাহাট এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াকে বিভক্ত করে বয়ে চলেছে মধুমতি নদী। এ নদীর মোল্লাহাট অংশের এক পাশে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, অন্যপাশে রয়েছে মোল্লাহাটের সোনাপুর- চরবাশুড়িয়া পাকা সড়ক ও কয়েকটি গ্রাম। কয়েক বছরে সোনাপুর ও চরবাশুড়িয়া গ্রামের শতাধিক বসতভিটা, বাড়ি-ঘর, রাস্তা, গাছ-পালা, বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়েছে মধুমতির ভাঙ্গনে। ফসলি জমি হারিয়ে নিস্ব হয়েছেন দুই গ্রামের অনেক মানুষ। এখনও থেমে নেই মধুমতির ভাঙ্গন। এ নদীর সোনাপুর- চরবাসুড়িয়া তীরের ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার তীর প্রবল ভাঙ্গনের ঝুুঁকিতে রয়েছে।বিলীন হতে পারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সেচ ভবন, সোনাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা।

স্থানীয়রা বলেন, মধুমতি নদী ভাঙ্গনে গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর সরে যাওয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টির মৌসুম আসলেই গরু-বাছুর, গাছপালাসহ মূল্যবান সম্পদ নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। এ দুই গ্রামের মানুষ ও তাদের জানমাল রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।

সোনাপুর গ্রামের নজরুল মোল্লা বলেন, মধুমতির ভাঙ্গনে প্রায় সাত বিঘা জমি হারিয়েছি। তিনবার ঘর সরিয়ে অন্য জায়গায় এনেছি। এরপরের বার ভাঙ্গলে যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত শেখ বলেন, চোখের সামনেই অনেকের বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হতে দেখেছি। ফসলি জমি বাড়ি ঘর হারিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে। এখন যারা এ এলাকায় বসবাস করছেন তাদের অনেকেই ঝুুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

স্থানীয় লুৎফর মোল্লা, ইমরান ফকির, মোঃ প্যারিস শেখ, আবেদ আলীসহ কয়েক জন বলেন, মধুমতির ভাঙ্গনে সোনাপুর গ্রামের কয়েক জায়গায় পাকা সড়কটির অর্ধেকাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেকের ফসলী জমিও নদীতে চলে গেছে। বিএডিসির সেচ সাপ্লাাইয়ের জন্য নির্মিত ভবনটিও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে মধুমতির ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া কোন উপায় নেই বলে দাবি করেন তারা।

সাথী বেগম নামের এক নারী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নদীর চরের মাটি ইট ভাটায়ে ব্যবহার করছে। এর ফলে মধুমতির ভাঙ্গন আরও প্রবল হচ্ছে। ইট ভাটা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এ নারী।

মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লিটন মোল্লা বলেন, চরবাসুরিয়া ও সোনাপুর গ্রামের ফসলি জমিগুলো খুবই উর্র্বর। প্রতিটি জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল হয়। এত উর্র্বর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী গিলে খাচ্ছে বসত ঘর, বাপ-দাদার ভিটে মাটি। এ দুই গ্রামের মানুষ ভাঙ্গনের মারাত্মক ঝুুঁকিতে রয়েছে। অতিদ্রুত এএলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় অতিদ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এ জন প্রতিনিধি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মধুমতি নদীর ৩ হাজার ৪০০ মিটার এলাকা ভাঙ্গনের ঝুুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ আমি ঝুুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শণ করেছি। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও বৃষ্টির মৌসুমে ঝুুঁকিপূর্ণ এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান এ কর্মকর্তা। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান