বাজেটের প্রতিটি পয়সার যথাযথ ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী

ঘোষিত উন্নয়ন বাজেটের প্রতিটি পয়সা যেন যথাযথ ব্যবহার হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সরকারি কর্মচারিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার সরকারি সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন,‘একটা বিশাল বাজেট দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সেই বাজেটের প্রতিটি টাকা যাতে যথাযথভাবে ব্যবহার হয় সে বিষয়েও সচেতনতা দরকার।’

বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) বার্ষিক সম্মেলন ২০১৮ তে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের সম্পদ কোনভাবেই যেন লুটপাট করা না হয় সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সেবা পেতে যে কোন সমস্যা নিরসনে গণশুনানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এবং বিএএসএ সভাপতি ও তথ্য সচিব আব্দুল মালেক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বিএএসএ মহাসচিব এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী সভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব ও সচিব, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, আমন্ত্রিত অতিথি এবং বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা যখন গ্রহণ করি তখনও আমি চাই এর সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকেন তারা যেন কোনটা যথাযথভাবে মানুষের প্রয়োজন এবং কাজে লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন। জনসেবা যেন আরো বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন যাতে গতিশীলতা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ অনেক কষ্ট করে আমরা টাকা-পয়সা জোগাড় করি।

সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের সার্বিক কৌশল হিসেবে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ প্রণয়ন এবং ৫৭টি চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকান্ডে দক্ষতা বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রের তাৎক্ষণিক যোগাযোগের লক্ষ্যে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য চালু করা হয়েছে ওয়েবভিত্তিক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, যেখানে সকল নাগরিক তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারবেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে দপ্তরসমূহের দুর্নীতি প্রবণ এলাকাসমূহ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকারের কর্মসূচিসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দিকে লক্ষ্য রাখতে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জাতির বিজয়ের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। আর বিকৃত ইতিহাস মানুষের বিকৃত চরিত্রই সৃষ্টি করে। এর হাত থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে বিজয়ী জাতি, সেই বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বিজয় নিয়ে গর্ব অনুভব করার মতো শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে দেশপ্রেমে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যেতে পারবে।

জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কন্ঠে বলেন, আমরা এদেশে কঠোর হস্তে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের দেশকে মাদকমুক্ত করতে হবে। তিনি এ জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সামাজিক অন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় তাঁর দৃঢ়প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশকে ক্ষুধামুক্ত এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। এখন দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা এবং জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। গ্রামের জনগণ নগরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। আর তা বাস্তবায়নে সরকারী কর্মচারীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।

এসময় বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও তথ্য সচিব আব্দুল মালেক এসোসিয়েশনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রীও এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতির হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

আজকের বাজার/এমএইচ