বাণিজ্য সম্মেলনে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে

মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী ‘বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২১’ এ অংশগ্রহনকারী বিনিয়োগকারীরা ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক এ বাণিজ্য সম্মেলনের বিষয়ে সোমবার আউটকাম ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান এ তথ্য জানান। এ সময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, সম্মেলন চলাকালীন সময়ে আয়োজিত বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সেশনে বিশে^র ৩৮টি দেশের ৫৫২টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ ভার্চুয়ালি ৩৬৯টি বিটুবিতে অংশগ্রহণ করে, যেখানে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সম্ভাবনার আশ^াস এসেছে।
তিনি আরো জানান, ১৩টি দেশের ২০টি কোম্পানী যৌথ বিনিয়োগ আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ হতে ২৬টি পণ্য আমদানির বিষয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, অবকাঠমো, ঔষধ, বেবী বোটল, ছাতা, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ৫টি দেশের (চীন, নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা ও ভারত) উদ্যোক্তাবৃন্দ সরাসরি বিনিয়োগের বিষয়ে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং জ¦ালানি, বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ¦ালানী, ডেইরী প্রডাক্টস্, চামড়া, তৈরি পোষাক, এফএমসিজি, পাট, অটোমোবাইল প্রভৃতি খাতেও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে বিষয়ভিত্তিক ৬টি ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়। যেখানে অংশগ্রহণকারি আলোচকরা ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে নীতিমালার সংস্কার, সহায়ক নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা তৈরি, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া তারা দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সহায়তা প্রদান, এফটিও এবং পিটিএ স্বাক্ষর ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের সুপারিশ করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া-প্যাসিফিক প্রভৃতি অঞ্চল হতে বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি সম্প্রসারণের বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সাথে দ্রুততম সময়ে এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের জন্য উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষনে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রয়াসেরই প্রতিফলন এবং এর মাধ্যমে কোভিড মহামারী সময়েও বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও সক্ষমতার বিষয়টি সারাবিশে^র নিকট তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তীতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আমাদেরকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। তবে এফটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে উভয় দেশের শুল্ক কাঠামো পুনঃবিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ মত প্রকাশ করেন এবং এলক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই আমাদের বিদ্যমান শুল্ক হার কমানো সম্ভব নয়, কারণ এর ফলে আমাদের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস হতে পারে, পাশপাাশি স্থানীয় শিল্পায়নকে সহায়তার বিষয়েও সরকারের সতর্ক থাকতে হবে।
বাণিজ্য সচিব জানান, দেশের ব্যবসাবন্ধব পরিবেশ আরও উন্নতকরণের লক্ষ্যে সরকার প্রদত্ত সকল ধরনের সেবা ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সরকারি সেবা পেতে দেশবাসীর কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘব হবে।
রপ্তানিমুখী পণ্যের সম্প্রসারণে দেশের সম্ভাবনাময় চামড়াখাতের জন্য সরকার ঘোষিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় অন্তত ১টি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন বলে তপন কান্তি ঘোষ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি তৈরি পোষাক খাতের ন্যায় সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহে বন্ড সুবিধা প্রদান করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।