বিক্রি করা নবজাতক ফেরত পেলেন লালমনিরহাটের সেই মা

ঋণ পরিশোধের জন্য নবজাতককে বিক্রি করে দেয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম (৩৫) সন্তান ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবে ঘর ও ভাতা পেতে যাচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার ইউএনবিতে সংবাদ প্রকাশের পর রাতে নবজাতককে ফেরত এনে মায়ের হাতে তুলে দেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নির্দেশে শুক্রবার দুপুরে হাসিনার বাড়িতে যান ইউএনও মনসুর ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। এ সময় বিক্রি করা নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসতে ক্রেতাকে ফোন করা হলে তারা রাতে শিশুটিকে নিয়ে আসার কথা বলেন। এরপর ইউএনও ও ওসি রাতে পুনরায় হাসিনার বাড়িতে যান এবং নবজাতককে গ্রহণ করে মায়ের হাতে তুলে দেন।

এ সময় হাসিনা বলেন, ‘ছাওয়া (নবজাতক) ফেরতসহ নগদ টাকা পাইলাম এবং ভাতা ও ঘর দিবার চাইছে। যারা এসব দিল আল্লায় তাদের ভালো করবে।’

এ বিষয়ে মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রশাসনকে সহায়তা করায় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ইউএনও মনসুর বলেন, ‘প্রতিবেদন দেখে নবজাতককে ফেরত নিয়ে এসে হাসিনা বেগমের কোলে তুলে দিয়েছি। একই সাথে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর পক্ষে নবজাতকের জন্য ১০ হাজার টাকার পাশাপাশি হাসিনাকে প্রতিবন্ধী ভাতাভুক্তসহ তাকে ও তার ভাই কেরামতকে ঘর করে দেয়া হবে।’

নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও কোনো প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।

হাসিনা উপজেলার টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী ও একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের আজিজার রহমানের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, ১৮-২০ বছর আগে জোকতার আলীর সাথে বিয়ে হয় হাসিনার। হাসিনা ছিলেন জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন পর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনার ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। সংসারের খরচ বহন না করলেও স্বামী জোকতার সম্পর্ক রেখেছিল হাসিনার সাথে। এরই মাঝে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। বড় মেয়ে রোসনার বিয়ে দেন।

ফুটো টিনের ওপর পলিথিন সাঁটানো একমাত্র ঝুপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন হাসিনা। কিন্তু করোনাকালে কাজ না থাকায় সংসার চালাতে গিয়ে তার দেনা হয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সকালে তিনি একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। পরে তার ভাই নিঃসন্তান কেরামত আলী বোনের সন্তানটিকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাধা দেন হাসিনা ও তার বড় ছেলে হাসান।

অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পতির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করেন। ফলে হাসিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোরপূর্বক সন্তানকে রাজাহাটের দম্পতির হাতে তুলে দেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকায় ঋণের ১০ হাজার পরিশোধ করেন হাসিনা।